কর্মস্থলে না এসেও দেড় বছর ধরে বেতন নিচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার মধ্য রানীসার কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) জহুরা বেগম দেড় বছর ধরে কর্মস্থলে আসেন না। কিন্তু এই সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শকের সহযোগিতায় নিয়মিত বেতন তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, জহুরা বেগমকে মাসে একদিনও ক্লিনিকে দেখা যায় না। দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে তিনি একবার ক্লিনিকে এসেছিলেন। এতে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতায় এমনটি হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বিষয়টি সঠিকভাবে তদারকি করছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গোসাইরহাট উপজেলায় ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিকে একজন সিএইচসিপি, একজন পরিবার পরিকল্পনাকর্মী এবং একজন স্বাস্থ্য সহকারী আছেন। নিয়ম অনুযায়ী সিএইচসিপি কর্মীরা সরকারি বন্ধের দিন ছাড়া বাকি দিনে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মী ও স্বাস্থ্য সহকারীদের সপ্তাহে দুই দিন ক্লিনিকে এবং অন্য দিনে মাঠে কাজ করার নির্দেশনা রয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা মাসের প্রথম অথবা শেষে একদিন ক্লিনিকে গিয়ে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের সই করেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোসারহাট নাগেরপাড়া ইউনিয়নের রানীসার এলাকায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী। মাঝে মাঝে পাশের ক্লিনিক থেকে সুকুমার নামে এক সিএইচসিপি আসতেন। এখন তিনিও আসা বন্ধ করেছেন। ওই ক্লিনিকের সিএইচসিপি কর্মস্থল রেখে ঢাকায় বসবাস করেন। তবে সেখান থেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম খানের যোগসাজশে প্রতি মাসের বেতন তুলে নিচ্ছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, মাসের পর মাস ক্লিনিক বন্ধ থাকে। এখানকার সিএইচসিপি দেড় বছর ধরে ক্লিনিকে আসেন না। মাঝে মাঝে দেখা যায়, পাশের ইউনিয়নের সিএইচসিপি এসে ওষুধ পানিতে ফেলেন। অথচ আমরা চিকিৎসার জন্য ওষুধ পাই না।

এ বিষয়ে কথা বলতে সিএইচসিপি জহুরা আক্তারের মোবাইল ফোনে কল করা হয়। তবে সাংবাদিক পরিচয় জানে কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ হয়নি।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য সহকারী পরিদর্শক এনামুল হক বলেন, ‘জহুরা বেগম দেড় বছর ধরে কর্মস্থলে আসেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানিয়েছি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ম্যানেজ করে বেতন দিচ্ছি। মাঝে মাঝে পার্টটাইম করে সুকুমারকে দিয়ে চালিয়েছি। স্যাররা পরিদর্শনে এসেও তাকে পাননি, তারপরও তিনি নিয়মিত বেতন কীভাবে নেন, সেটা আমার জানা নেই।’

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাকে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিক দেখতে হয়। অনেক কাজ থাকে। তিনি সাত মাস ধরে ক্লিনিকে যান না। স্যার হয়তো দয়া করে বেতন দিয়েছিলেন। এখন তার বেতন বন্ধ রয়েছে।’

সুকুমারের আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি আগে আসতেন, এখন আর আসেন না। যেহেতু জহুরা বেগম আসেন না, এ কারণে তাকে আসতে বলেছিলাম।’

গোসারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। দুই মাস ধরে তার বেতন বন্ধ রেখেছি।’

শরীয়তপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, ‘চাকরিস্থলে না থেকে বেতন নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’