‘ঘুষের’ টাকা না পেয়ে রোগী ও তার স্বজনদের মারধর, চিকিৎসাসেবায় নানাবিধ হয়রানি ও অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের মিলেছে নানা অনিয়মের সত্যতা।
এর আগে ১৪ জুন বাংলা ট্রিবিউনে ‘নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের মারধর করলেন ওয়ার্ড বয়’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রচারের পর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কর্মচারীর বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া সংবাদটি দুদকের নজরে এলে তারা হাসপাতালে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
তিন সদস্য বিশিষ্ট টিমের অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের নোয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ডিডি) আবদুল্লাহ আল নোমান। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন– উপসহকারী পরিচালক মো. জাহেদ আলম ও কোর্ট পরিদর্শক মো. ইদ্রিস।
জানা যায়, নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় নানাবিধ হয়রানি ও অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় নোয়াখালী থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে রোগীদের ওষুধ সরবরাহ, ডায়ালাইসিস সেবা এবং মেডিক্যাল টেস্ট সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কিনা তা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা হয়। পাশাপাশি সেবার মানোন্নয়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও গত ১৩ জুন ঘুষের টাকা না দেওয়ায় রোগী ও স্বজনদের এক ওয়ার্ডবয়ের মারধরের অভিযোগের বিষয়েও অনুসন্ধান করা হয়। দুদক টিম অভিযোগের ভিত্তিতে হামলার শিকার রোগী এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা অন্য রোগীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পায়। অভিযানের সময় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্রও পর্যালোচনা করা হয়।
দুদকের নোয়াখালী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ডিডি) আবদুল্লাহ আল নোমান বাংলা ট্রিবিউনকে অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘অভিযানে নানা অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। অভিযানের ফলাফল ও সুপারিশ সংবলিত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দুদক সদর দফতরে দাখিল করা হবে। এ ছাড়াও রোগীকে মারধরের প্রমাণও মিলেছে। অভিযানে তত্ত্বাবধায়ক জানান, ঘটনার পরপরই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবায় অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কমিশনের অভিযান নিয়মিত চলবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের জনবল ঘাটতি আছে। এ ছাড়াও সরকার আউটসোর্সিং নিয়োগ না দেওয়ায় আমাদের পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হয়। আমরা দেখছি কীভাবে সেবার মান উন্নয়ন করা যায়। ঘুষের টাকা না দেওয়ায় রোগী ও স্বজনদের এক ওয়ার্ডবয়ের মারধরের ঘটনায় আগামীকাল তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।’