স্কুলের ভেতরে শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যা করলো কে?

টাঙ্গাইল শহরের সৃষ্টি স্কুলের আবাসিক ভবনে শিহাব মিয়া (১১) নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসক। কিন্তু স্কুলের ভেতরে শিশু শিক্ষার্থীকে হত্যা করলো কে? কি কারণে হত্যা করা হয়েছে, তা নিয়ে শহরে চলছে নানা আলোচনা।

কেউ কেউ বলছেন, কোনও শিক্ষকের গোপন কোনও  বিষয় হয়তো শিহাব দেখে ফেলেছিল। গোপন বিষয়টি ফাঁসের ভয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার অভিযোগের তীর আবাসিক শিক্ষকদের দিকে।

শিহাবের ফুফাতো ভাই আল আমিন সিকদার বলেন, ‘শিহাব দেখতে অনেক সুন্দর। কোনও শিক্ষক হয়তো তাকে ধর্ষণ করেছিল। বিষয়টি ঢাকতে হত্যা করতে পারে। আবার হয়তো আবাসিক কোনও শিক্ষকের কেলেঙ্কারির তথ্য জেনেছিল শিহাব। হয়তো এসব তথ্য ফাঁসের ভয়েও হত্যার শিকার হতে পারে। আমরা চাই, ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে মূল আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যাতে আর কোনও স্কুল বা কোথাও কোনও শিশু হত্যার শিকার না হয়। এ ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

শিহাবের বাবা ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘সৃষ্টি স্কুল মানুষ মারার কারখানা খুলেছে। আমার ছেলেকে তারা হত্যা করেছে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা পারেনি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়টি এসেছে। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

এর আগে রবিবার (২৫ জুন) দুপুরে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিহাবকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে শিশুটির ময়নাতদন্ত করা হয়। রবিবার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনটি থানায় পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’

এদিকে, শিহাবের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই পরিবার হত্যার কথা বলে আসছিল। শিহাবকে হত্যার অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল শহরে একাধিক ও তার নিজ উপজেলা সখিপুরে একাধিকবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়া ঢাকাতেও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে টাঙ্গাইল উত্তাল। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও রহস্য উদঘাটনে প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও তার পরিবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

স্কুলের আবাসিক ভবন থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ তেমন কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীর পরিবার। সচেতন মহলেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও সচেতন মহল ভুক্তভোগী পরিবারের পাশে থাকায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শিহাবের বাবা-মা।

হত্যার বিষয়টি নিয়ে জানতে সৃষ্টি শিক্ষা পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রিপনের মোবাইলে বারবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। তবে সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের অধ্যক্ষ মীর নাজমুল আলম সাদ বলেন, ‘ঘটনাটি আবাসিক ভবনে ঘটেছে। কীভাবে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’

ঘটনার দিন শহরের সৃষ্টি স্কুলের আবাসিক ভবনের দায়িত্বে থাকা ভাইস প্রিন্সিপাল আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘টয়লেটের ঝরনার সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে। কেন আত্মহত্যা করেছে, আমরা জানি না।’

টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ২০ জুন সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা সুপারি বাগান এলাকার সৃষ্টি স্কুলের আবাসিক ভবন থেকে শিহাব মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান ভবনে দায়িত্বরত শিক্ষকরা। শিহাব মিয়া (১১) জেলার সখিপুর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামের প্রবাসী ইলিয়াস হোসেনের ছেলে। ওই দিনই শিশুটিকে হত্যার অভিযোগ তোলে পরিবার। পরে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাথমিক পর্যায়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।