ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলায় উপচে পড়া ভিড়, আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা

ছুটির দিনে জমজমাট ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ২৭তম আসরের এই মেলার ১৩তম দিনে (১৩ জানুয়ারি) বিকাল থেকে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার স্টলে স্টলে চলছিল ক্রেতাদের দরদাম। আগের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মেলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, বিকাল থেকে লোকসমাগম বাড়তে শুরু করেছে। সন্ধায় প্রবেশ গেটে কয়েকবার জটলা তৈরি হয়েছে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা গিয়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করেছে।

গত ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) দ্বিতীয়বারের মতো মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আসর বসেছে। মেলার শুরু থেকে লোকসমাগম একেবারে ছিল না। তার ওপরে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে।

তবে পঞ্চম দিন থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) থেকে বাণিজ্য মেলা জমে উঠেছে। আজ দ্বিতীয় শুক্রবার পুরোদমে জমে উঠেছে মেলা।

সরেজমিন দেখা যায়, দুপুর থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের পদচারণে বাড়তে শুরু করে। এদিন জুমার নামাজের জামাতে অনেক মুসল্লিকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়নি। বিকাল থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। মেলার দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে খাবার দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়।

মেলার আকর্ষণ বিখ্যাত রাজা চায়ের দোকানে চা-পিপাসুদের ভিড় দেখা যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে টোকেন দিয়ে চা পান করতে দেখা গেছে মানুষকে।

চায়ের স্টলের তত্ত্বাবধায়নে থাকা জুয়েনা সুলতানা বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় চাপ একটু বেশি। তাই লাইন ধরে টোকেন দিয়ে চা সংগ্রহ করেছেন। আর প্রতি টোকেনের মূল্য ৫০ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে এই চায়ের ব্যবসা শুরু হয়। আজ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজা চায়ের ১৮টি শাখা খোলা হয়েছে। মিরপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নরসিংদী, মাধবদী, গাজীপুর, শ্রীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে শাখাগুলো।’

কসমেটিকস স্টলের মালিক বাবু আহমেদ বলেন, ‘আজ অনেক লোকসমাগম হয়েছে। তবে এরা সবাই ক্রেতা না। অনেকে ঘুরতে ও দেখতে এসেছেন। তবে তুলনামূলক বিক্রি বেড়েছে। মেলার প্রথম দিকে ক্রেতা অনেক কম ছিল, এখন বেড়েছে। কয়েক দিন পর আরও বাড়বে।’

নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম মেলায় ঘুরতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিনে স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় এসেছি। আজ অনেক লোক হয়েছে, বাইরে-ভেতরে অনেক ভিড়। ছুটির দিন হওয়ায় লোকসমাগম বেশি হয়েছে। তবে খাবার দোকানে ও নারীদের পণ্যের দোকানগুলোয় ভিড় সবচেয়ে বেশি।’

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেলা জমে উঠেছে। গত শুক্রবারের তুলনায় আজ লোকসমাগম বেশি হয়েছে। আজ প্রায় দেড় লাখের অধিক লোক এসেছে মেলায়। এটা দুই লাখ ছড়িয়ে যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। ১৫ তারিখের পর মেলা আরও জমজমাট হবে। মেলায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গুটি কয়েক চুরি ও পকেটমারের মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে আমরা যথাসময়ে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। এ বিষয়ে আমাদের টিম কাজ করছে।’

মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১ প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এরমধ্যে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ১০৬টি স্টল বেড়েছে। বিদেশি ১০ দেশের ১৭টি স্টল রয়েছে। এবার বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন আয়োজকরা। খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ।

মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড় আছে। মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।