নিহত রবিউলের পায়ের গোড়ালিতে আঘাতের চিহ্ন

‘লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। নাক-মুখে রক্ত, দুই পায়ের তালু, গোড়ালি ফাটা ও রক্তাক্ত ছিল। দুর্ঘটনায় সাধারণত এমন আঘাত থাকে না। কেউ মারধর অথবা আঘাত করলে এমন চিহ্ন দেখা যায়।’ গাজীপুরে ‘পুলিশের নির্যাতনে’ নিহত রবিউল ইসলামের শ্যালক রফিকুল ইসলাম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ দেখে এসব দাবি করেন।

রফিকুলের দাবি, ‘রবিউলের পরিবার শোকাহত একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। এ অবস্থায় তারা আইনি ব্যবস্থা বা মামলা করবে কি না তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বুধবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে রবিউলের লাশ গ্রহণ করে পরিবার। পরে স্বজনরা লাশ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জে তাদের গ্রামের বাড়ি পৌঁছে। বেলা ১১টার দিকে বাড়ির পাশেই জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘রবিউলের বাবা জীবিত রয়েছেন। ছেলের এমন মৃত্যুতে তিনিও বাকরুদ্ধ। স্বজনরা সবাই বাড়িতে এসেছেন, শোকের মাতম চলছে। এই অবস্থায় ইচ্ছা থাকলেও কেউ আইনি পদক্ষেপ নিতে সাহস করে না। স্বজনদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থার বিষয়টি পরে নির্ধারিত হবে।’

জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ভোগড়া পেয়ারা বাগান এলাকা থেকে সুতা ব্যবসায়ী রবিউলকে অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতিবেশী স্বপন খানসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শনিবার (১৪ জানুয়ারি) রবিউলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার সঙ্গে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের ছেড়ে দিলেও পুলিশ মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত রবিউলকে ছাড়েনি। বাসন থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে রবিউলের স্ত্রী নুপুর বেগমকে খবর দিয়ে থানায় নিয়ে যায়।

থানায় গেলে পুলিশ তার কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে জানান, তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। ওই রাত ৩টায় তিনি জানতে পারেন তার স্বামী ঢাকা মেডিক্যালে মারা গেছেন। আর গত রাতে তাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-অপরাধ) আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান দাবি করেন, ‘গাজীপুর মহানগর পুলিশ নিহত রবিউলের সুরতহাল করেছে। সেখানে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর আলামত মিলেছে। নাকে-মুখে, পায়ে দুর্ঘটনাজনিত রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের আগে হাসপাতাল থেকে একটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ হয়। সেখানে দুর্ঘটনাজনিত আলামত পাওয়া গেছে। রবিউলের স্বজনরা চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের সার্টিফিকেট পেয়ে ময়নাতদন্ত করবে না বলে লাশ নেওয়ার জন্য শাহবাগ থানায় আবেদন করেছে। পরে আর ময়নাতদন্ত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে নিহতের রবিউলের ভাই বাসন থানায় একটি দুর্ঘটনার মামলা করেছেন। পুলিশ বক্স ভাঙচুর, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিতের প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় মামলা হবে।’

গাজীপুর মহানগর পুলিশের এই উপ-কমিশনার বলেন, ‘বাসন থানায় রবিউলসহ চার জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা শুধুমাত্র রবিউলকে আটকের বিষয়টি জেনেছি।’ পরে রবিউলের সঙ্গে আটক হওয়া দেলোয়ার নামে অপর একজনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাও আমরা এইমাত্র শুনলাম।’

তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বুধবার তদন্ত কমিটি হয়েছে। আজ থেকে আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। এ মুহূর্তে তদন্তের জন্য কোনও ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হয়নি। পরবর্তী কার্যদিবস থেকে তদন্তের কাজটি পুরোপুরি শুরু হবে।’

রবিউলকে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) থানায় আনা ও নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগের ব্যাপারে সিসি ক্যামেরার ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাসন থানায় সিসি ক্যামেরাটি সরকারিভাবে বরাদ্দ হয়নি। সিসি ক্যামেরা আমাদের প্রয়োজনে পুলিশ সদস্যদের বরাদ্দ থেকে কেনা হয়েছে। তাছাড়া ক্যামেরাটি বেশ কিছুদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।’

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান (শাহনাজ গলি) এলাকার সুতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে পুলিশ নির্যাতনের হত্যার অভিযোগ- এমন খবর প্রচার হওয়ায় বুধবার সকাল ১০টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।