শেষ হলো বাণিজ্য মেলা, ১০০ কোটি টাকার বেচাকেনা

পর্দা নামলো ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের। মাসব্যাপী চলা এই মেলা মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) রাত ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। মেলায় ৩০ লাখ দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল। গত ৩১ দিনে ১০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছে।’

এদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। শেষ দিন সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট দিয়ে পণ্য বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে সবগুলো স্টলে ছিল ক্রেতাদের ভিড়।

অপরাজিতা নারী উদ্যোক্তা সমবায় সমিতি নামের ব্লেজারের দোকানের বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, ‘মেলার শেষ দিন সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট দিয়ে ১২০০ টাকায় ব্লেজার বিক্রি করেছি আমরা। মেলার শুরুতে এসব পণ্যের দাম অনেক বেশি ছিল। আজ সব পণ্যের ছাড় ছিল। বেচাকেনা ভালো হয়েছে আমাদের।’

আপন ফ্যাশনের বিক্রেতা নাজমুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে সব ডেনিম ব্লেজার বিক্রি করেছি। শেষ সময়ে ডিসকাউন্ট দিয়ে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এসব ব্লেজার মেলার শুরুতে ২৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’

মেলার শেষ দিন সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট দিয়ে ব্লেজার বিক্রি

নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দা সাবিত হোসেন বলেন, ‘ডেনিম ব্লেজারের দাম ১৩০০ টাকা চেয়েছেন দোকানি। ১০০০ টাকা বলেছিলাম। কিন্তু দোকানি ১১০০ টাকা সর্বশেষ দাম বলেছেন। শেষ দিন বলে কিনলাম।’

মঙ্গলবার বিকালে মেলার ২৭তম আসরের সমাপনী পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘এবার আমরা বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করেছি। মেলায় প্রায় ৩০ লাখ দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল। ১০০ কোটি টাকার মতো কেনাবেচা হয়েছে; যা আমাদের জন্য আশাব্যঞ্জক।’

মেলার কারণে ৩০০ কোটি টাকার মতো রফতানি অর্ডার এসেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘১৩টি বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের মেলায় যুক্ত হয়েছে। এই বছর ৬৭ বিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট টার্গেট করেছি। বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি কিছুটা চিন্তিত করেছে আমাদের। কিন্তু আমরা আশাবাদী, টার্গেট পূরণ করতে পারবো।’

এবারের মেলায় আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে জানিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমাদের এই ভেন্যু সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে। মেলায় প্রায় ৩০ লাখ দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল। ১০০ কোটি টাকার মতো কেনাবেচা হয়েছে।’

মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১ প্রতিষ্ঠানের স্টল ছিল জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন ছিল। গত বছরের চেয়ে এবার ১০৬টি স্টল বেড়েছে। ১০ দেশের ১৭টি স্টল ছিল। এবার বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’

গত ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) দ্বিতীয়বারের মতো বাণিজ্য মেলার আসর বসে। শীতের কারণে মেলার শুরুতে লোকসমাগম কম ছিল। তবে পঞ্চম দিন থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ৬ জানুয়ারি থেকে জমে উঠে মেলা। দ্বিতীয় শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ও তৃতীয় শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) মেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে। ২৭ জানুয়ারি শুক্রবার সর্বোচ্চ ক্রেতা-দর্শনার্থী আসেন।

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৭তম আসরের সমাপনী পর্বের আয়োজন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন আয়োজকরা। খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট ছিল। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা ছিল। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করেছে। এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ টাকা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলেছিল বেচাকেনা। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাত ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড় ছিল। প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা ছিল।