ডালেশ্বর-দরগাহচালা এখন ‘ছিপের গ্রাম’

পাতা দিয়ে তৈরি ছাউনির নিচে ভ্যাকুয়াম দিয়ে কয়লায় আগুন দেওয়ার কাজ চলছে। আগুনে পোড়ানো হচ্ছে বাঁশের তৈরি মাছ ধরার জালের কুঁড়ো, মাছ ধরার ছিপ ও লাঠিসহ নানা উপাদান। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের ডালেশ্বর ও দরগাহচালা গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে এমন চিত্র। গ্রাম দুটির প্রায় অর্ধশত পরিবার বাঁশের উপকরণ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব উপকরণ বাজারে বিক্রি করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন। গ্রাম দুটি এখন মাছ ধরার ‘ছিপের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

উদ্যোক্তা নার্গিস আক্তার জানান, তারা স্বামী-স্ত্রী ১৭ বছর ধরে বাঁশের লাঠি তৈরি করছেন। গ্রাম থেকে বাঁশ কিনে শ্রমিক দিয়ে তা কাটা হয়। কারিগর দিয়ে বাঁশ পুড়িয়ে নানা জাতের উপকরণ তৈরি করেন তারা।

উদ্যোক্তা রুবেল ফকির জানান, বছরের ছয় মাস ব্যবসা ভালো যায়। বিশেষ করে বৈশাখ মাস থেকে কার্ত্তিক মাস পর্যন্ত মাছ ধরা ছিপের চাহিদা থাকে। রাজশাহী নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তারা এসব সরবরাহ করেন। ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে আনা, সাইজ করা পর্যন্ত তিন ধরনের লাঠি পান। এর মধ্যে ভালো লাঠি ৫০-৭০, মাঝারি ৩০-৪০ ও একটু নিম্ন মানের লাঠি ১৫-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেন।

বাঁশ পরিষ্কার করছেন দুইজন

কারিগর শামসুদ্দীন জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। প্রতিদিন ৭০০ টাকা মজুরি পান। পরিবারের পাঁচজন সদস্য নিয়ে সুখেই আছেন। প্রতিদিন তিনি কমপক্ষে ১০০ মাছ ধরা ছিপ তৈরি করতে পারেন। আগে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য এই কাজ করলেও এখন ভালো লাগার জন্য করেন।

কারিগর আমীর আলী জানান, তিনি বাঁশ দিয়ে লাঠি জাতীয় উপকরণ তৈরির কাজ করছেন প্রায় ১৫ বছর ধরে। ঝাড় থেকে বাঁশ কিনে এনে প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত কাজে প্রতিদিন ৭০০ টাকা মজুরি পান। তার সঙ্গে আরও সাতজন শ্রমিক কাজ করেন।

দিনমজুর আয়েশা আক্তার (৭০) জানান, দেড় বছর আগে তার স্বামী মারা যান। এরপর থেকে তিনি বাঁশ দিয়ে নানা জাতের লাঠি তৈরি করে জীবনযাপন করছেন। এ কাজ করে মজুরি হিসেবে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পান। তা দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বাঁশের ছিপ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন দুই গ্রামের অনেকে

এলাকাবাসী জৈনুদ্দীন জানান, এ এলাকায় রুবেল, মান্নান, হালিম, আলাউদ্দিন, শামছুলসহ অনেকেই বাঁশ দিয়ে নানা জাতের লাঠি ও মাছ ধরার উপকরণ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এক-দুই সপ্তাহ পর পর ট্রাক-পিকআপ ভ্যান ভর্তি করে ময়মনসিংহ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুরসহ দেশের বেশিরভাগ নদীবেষ্টিত জেলাগুলোতে এসব উপকরণ সরবরাহ করেন তারা। বাঁশের তৈরি মাছ ধরার ছিপ, জালের কুঁড়ো ও লাঠি তৈরির কারণে ডালশ্বের ও দরগাহচালা গ্রাম মাছ ধরার ছিপের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বেশ কিছু পরিবার অনেক আগে থেকেই মাছ ধরার ছিপ তৈরির ব্যবসা করে আসছে। লাভজনক এ ব্যবসা করে তারা পারিবারিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। সরকারিভাবে কোনও সহযোগিতার কথা তারা এখনও আমার কাছে বলেননি। তারা সরকারি সহযোগিতার জন্য আসলে বা জানালে আমি সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।’