আওয়ামী লীগ নেতার বিরু‌দ্ধে নারী শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অ‌ভি‌যোগ

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বিলকিস বেগম (৪০) নামে এক ইটভাটার শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। দাদনের ওপর দেওয়া টাকার জন্য ঘর থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে রাস্তায় বেধড়ক পেটানো হলে সেখানেই ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (০৬ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের ইন্দাচুল্লি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বিলকিস বেগম ইন্দাচুল্লি গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক আব্দুল করিমের স্ত্রী। অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার নাম নূরে আলম। তিনি গুনধর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

নিহতের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিলকিস বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রামের একটি ইটভাটায় কাজ করেন। বর্ষাকালে ইটভাটার কাজ বন্ধ থাকায় সম্প্রতি গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন তারা। আওয়ামী লীগ নেতা নূরে আলম ও তার ভাই সুজন মিয়া বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিক সরবরাহ করেন। বিলকিসের স্বামী আব্দুল করিম গত বছর সুজনের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা দাদনের ওপর নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এই টাকার জন্য রবিবার দুপুরে সুজনের ভাই নূরে আলম বিলকিসের বাড়িতে যান। তখন বিলকিসের স্বামী করিম বাড়ি ছিলেন না। পাওনা টাকা নিয়ে দুই জনের কথা কাটাকাটি হয়। 

একপর্যায়ে নূরে আলম ক্ষিপ্ত হয়ে বিলকিসের চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে বাড়ির সামনে পাকা রাস্তায় নিয়ে যান। সেইসঙ্গে তাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন। পরে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এতে ওই নারী অজ্ঞান হয়ে যান। প‌রে সেখা‌নেই তার মৃত্যু হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইন্দাচুল্লি গ্রামের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নূ‌রে আলম প্রভাবশালী হওয়ায় মারধরের সময় বিলকিসকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে আসেননি। নির্মম মারধরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।’

গুনধর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়েম রাসেল ভূঁইয়া বলেন, ‌‘দাদনের টাকার জন্য ওই নারীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন নূরে আলম। এতে বিলকিস মারা গেছেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এ ঘটনায় ওই পরিবারের সদস্যদের আইনের আশ্রয় নিতে বলেছি।’

নূরে আলম গুনধর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বলে নিশ্চিত করেছেন করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ।

এদিকে, ঘটনার পরপরই নূ‌রে আলম গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তবে তার ভাই সুজন মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে নূ‌রে আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। 

করিমগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রত্যক্ষদর্শী ও গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, নূ‌রে আলমের মারধরে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নূরে আলমের ভাই সুজন মিয়াকে স্থানীয় মরিচখালি বাজার থেকে আটক করেছে পুলিশ। হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। একইসঙ্গে ঘটনায় জড়িত নূ‌রে আলমকে আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে।’