ভারী বৃষ্টিতে সবজির আবাদ পানির নিচে, লাখো টাকার ক্ষতি কৃষকের

প্রতিবছরের মতো এবারও প্রায় সাত বিঘা জমিতে করলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, গাজর, মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করেছেন কৃষক হুমায়ুন আহমেদ। জমিতে মিষ্টিকুমড়ার ফলন বেশি হলেও এখনও বাজারজাতের উপযোগী হয়নি। কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে অধিকাংশ খেত তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে মরতে শুরু করেছে অনেক সবজি গাছ। এতে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

হুমায়ুন আহমেদের বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ দৌলতদিয়া তোরাপ শেখ পাড়া। তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনি।

সরজমিনে দেখা যায়, হুমায়ুনের অধিকাংশ সবজিখেত পানির নিচে। চারদিকে পানি থাকায় পানি বের করার কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। যে কারণে তার খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজের ক্ষতিগ্রস্ত সবজিখেত দেখানোর সময় খুবই হতাশা প্রকাশ করেন।

হুমায়ন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর আগাম জাতের সবজির আবাদ করে থাকি। এ বছরও প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে মিষ্টিকুমড়া, এক বিঘায় করলা, এক বিঘা উচ্ছা, এক বিঘায় ফুলকপি, এক বিঘায় বাঁধাকপিসহ সাত বিঘা জমিতে নানা ধরনের সবজির আবাদ করেছি। সব এখন পানির নিচে। এতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে পানিতে সব তলিয়ে গেছে। পানি বের হওয়ার পথ খোলা নেই। এলাকার প্রায় তিন-চার শ কৃষক আগাম সবজির আবাদ করে থাকেন। শীতের শুরুতে এসব সবজি বাজারজাত করতে পারলে কৃষকরা অনেক লাভবান হতেন।

নিচু জমি, খাল-বিল পানিতে ভরপুর থাকায় পানি বের করার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই

হুমায়ুন আহমেদ বলেন, দুই বিঘা জমিতে জাঙলায় অনেক মিষ্টিকুমড়া ধরেছে। পানি জমে সব গাছের গোড়া তলিয়ে গাছ মরার উপক্রম হয়েছে। আশপাশের নিচু জমি, খাল-বিল পানিতে ভরপুর থাকায় পানি বের করার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই। যেখানে পানি ফেলবো, সেখানেই পানি। যে কারণে পুরো খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

হুমায়ুনের মতো উজানচর ইউনিয়নের নতুন পাড়ার কৃষক ইউনুস সরদার এক সপ্তাহ আগে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত জন করে শ্রমিক নিয়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বীজ রোপণ করেন। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পুরো পেঁয়াজ খেত নষ্ট হয়ে গেছে।

ইউনুস সরদার বলেন, তিন বিঘা জমিতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে পেঁয়াজ রোপণ করি। রোপণের দুই দিন পর এমন বৃষ্টি শুরু হয়, যা আগে কখনও দেখিনি। বৃষ্টিতে পুরো খেত নষ্ট হয়ে গেছে। খেত থেকে পানি নামলেও মাটির নিচ থেকে গ্যাস হয়ে পেঁয়াজ বীজ পচে যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। প্রায় ২৮৬ হেক্টর বা প্রায় ২ হাজার ১৪৫ বিঘা জমি আক্রান্ত হয়েছে। রোপা আমন ৯৮ হেক্টর, মাষকলাই ৭৮, শাকসবজি ৯৬, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৬, কলা ৫ হেক্টর এবং মুগডাল ৩ হেক্টর রয়েছে। 

তিনি জানান, শাকসবজি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলার মধ্যে দৌলতদিয়া ও উজানচর ইউনিয়নে আক্রান্তের পরিমাণ বেশি।