ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনা

আহত শিশু রবিউলের সন্ধানে আসেনি কেউ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালে ভর্তি আহত শিশু রবিউলের (৮) সন্ধানে এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি। তবে তার সুস্থতার জন্য সার্বক্ষণিক পাশে রয়েছেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ও নার্সরা।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, রবিউল এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ। ট্রেন দুর্ঘটনার পর সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। তারপর নিয়মিত পরিচর্যায় গত দুই দিনে সে অনেকটা ভালো আছে। তবে তার কথাবার্তায় কিছুটা অসংগতি রয়েছে। দুর্ঘটনার পর সে অজ্ঞান ছিল। পরে জ্ঞান ফিরে এলে, সে আমাদের জানিয়েছিল তার নাম রবিউল। কিন্তু ঠিকানা বলছে ভিন্ন ভিন্ন। একবার বলছে তার বাড়ি নরসিংদী, আরেকবার বলছে ঢাকার গুলিস্তানে। তবে আজ সকালের দিকে সে জানিয়েছে, তার বাবার নাম সুমন আর তাদের বাড়ি বরিশাল। সে ট্রেনেই থাকে, এ ছাড়া তেমন কিছু বলতে পারছে না।

তিনি আরও জানান, আমরা শিশুটির ব্যাপারে ভিন্ন চিন্তাও করছি। হতে পারে মাথায় আঘাত পেয়ে স্মৃতিশক্তিতে সমস্যা হচ্ছে। আমরা তাকে আরও দুই দিন পর্যবেক্ষণ করবো। তারপর সিটি স্ক্যান করাতে ঢাকায় পাঠাবো। তবে শরীরে বড় কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কোনও কিছুতে চাপা পড়ে হয়তো তার এমন অবস্থা হয়ে থাকতে পারে। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত।

জানা যায়, শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তির পর ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নিজের মোবাইল নম্বর (০১৭৬৬২৫৪৮৮২) ও শিশুটির ছবি দিয়ে তার অভিভাবকদের যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘ভৈরবে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় শিশুটি আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এখনও তার অভিভাবকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। যদি কেউ শিশুটিকে চিনে থাকেন অথবা তার অভিভাবকের পরিচয় জানেন তাহলে মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’ কিন্তু বুধবার দুপুর পর্যন্ত তার সন্ধানে কেউ আসেনি।

এ ব্যাপারে মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত শিশুর স্বজনদের খোঁজের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় খবর প্রকাশ হয়েছে। এরপরও শিশুটির স্বজনদের কোনও সন্ধান মেলেনি। শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের চিকিৎসকদের পাশাপাশি আমরাও তার পাশে আছি। তাকে শতভাগ সুস্থ করে পরিবারের নিকট পৌঁছে দিতে সার্বিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া যত দিন শিশুটির অভিভাবকের সন্ধান না পাওয়া যাবে, আমরা তার দেখাশোনা করবো।’

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব জংশনের সিগন্যাল আউটার এলাকায় ঢাকাগামী এগারসিন্ধুর গোধূলি ট্রেনের পেছনের দুটি বগিতে চট্টগ্রামগামী কার্গো ট্রেনের ধাক্কা লাগে। এতে ১৮ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনায় এগারসিন্দুর ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়েমুচড়ে যায়।