‘গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট’ এরকম সাজানো নির্বাচনে আর যাবো না: তৈমুর

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে পরাজিত প্রার্থী ও তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেছেন, ‘আমরা এরকম সাজানো নির্বাচনে আর যাবো না। তৃণমূল বিএনপির সব প্রার্থী ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবো। এই নির্বাচন হয়েছে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট। নৌকাও গভর্নমেন্ট, স্বতন্ত্রও গভর্নমেন্ট। মনে হচ্ছে, দেশটা একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। তবে তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে।’

বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এসে চনপাড়ার সন্ত্রাসী শমসেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রদান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। রূপগঞ্জের চনপাড়ায় তার পক্ষে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করায় জাকিয়া বেগম নামে এক নারীর বাড়িঘর দখল করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

ভূমিদস্যুরা তার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জে সকল ভূমিদস্যু আমার বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। ভূমিদস্যুরা মনে করেছে, তৈমুর আলম খন্দকার আসলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। কারণ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে শুরু থেকে আমি বিরোধিতা করে এসেছি। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, যাদের জমিজমা ভূমিদস্যুরা নিয়ে গেছে তারাও ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’

চনপাড়া এলাকায় বহু মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও সুফল পাননি উল্লেখ করে তৈমুর আলম বলেন, ‘রূপগঞ্জের চনপাড়া একটা সেনসেটিভ এলাকা। ফারদিন হত্যার পরে ডিবি পুলিশের বিভিন্ন তদন্তে পাওয়া গেছে, মাদকের প্রধান আখড়া হলো চনপাড়া। সেখানে দুই শতাধিক স্পটে মাদক বিক্রি হয়। সেখানে একটা সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে উঠেছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ওই এলাকার শমসের। যিনি এলাকায় শমসের ডাকাত হিসেবে পরিচিত। আরেকজন রয়েছে রিতা মেম্বার। এসব বিষয়ে আমরা বারবার বলে আসছিলাম নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলকে। এসব লোক যারা হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বহু মামলার আসামি, তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হোক। কিন্তু আমরা এর কোনও সুফল পাইনি।’

তার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় জাকিয়া বেগম নামে এক নারীর বাড়িতে লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হলে শমসের বাহিনী আমার লোকের বাড়িঘর লুট করে সব কিছু নিয়ে যায়। জাকিয়া বেগম আমার নির্বাচনি প্রচারণার কাজ করায় তাকে টার্গেট করে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। পরিবারটা আজকে আমার নির্বাচন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার, তাই পুলিশ সুপারের কাছে এসেছি। মানবিক কারণে আমি এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। আর পুলিশ সুপার আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, পরিবারটি নির্বিঘ্নে চনপাড়ায় বসবাস করতে পারবে। এই ঘটনায় এজাহার করা হয়েছে। ওই এজাহারে শমসের ও রিতাকে আসামি করা হয়েছে।’

এ দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি ইউনিয়নে প্রচারণা করতে গিয়ে দেখেছি নারীরা বলছে, টাকা দিয়ে যান, টাকা দিলে ভোট দেবো। এই দেশে এই সময়ে আমি মনে করি, সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মও পারবে না। তৃতীয় প্রজন্ম যদি চেষ্টা করে তাহলে ঠিক করতে পারবে। যারা সরকারে আছে তারা মনে করে, হেরে গেলে জেলে যেতে হবে। এ দেশের সিস্টেম এরকমই হয়েছে।’

রাজপথের রাজনীতিতে থাকবেন উল্লেখ করে তৈমুর বলেন, ‘আমরা সব সময় রাজপথে ছিলাম। বাকি জীবন রাজপথে থাকতে হবে। দেশের যে নির্বাচনি ব্যবস্থা এই ব্যবস্থায় আমরা আর টিকে থাকতে পারবো না।

প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে অংশগ্রহণ করে মাত্র ৩ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার। ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকে মো. শাহজাহান ভুঁইয়া পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৭৫ ভোট।