চোর সন্দেহে দুই যুবককে নাচানো হলো হিন্দি গানের তালে

টাঙ্গাইলের বাসাইলে চুরি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সালিশি বৈঠকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন চার জন। শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকালে বাসাইল পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার একটি খেলার মাঠে সালিশি বৈঠকে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে চোর সন্দেহে তিন জনকে পিকআপভ্যানে তুলে নিয়ে দুই জনকে হিন্দি গান বাজিয়ে নাচানোর ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেন শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সালিশি বৈঠকে হামলায় আহতরা হলেন- বাসাইল পূর্বপাড়া এলাকার জহির খানের ছেলে ওহাব খান (৪৫) ও তার ভাই রউফ খান (৫০), ওহাব খানের স্ত্রী বিউটি বেগম (৩৫), পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার আলী আকবরের ছেলে মজনু মিয়া (১৮)। এর মধ্যে তিন জন বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর বাসাইল পৌরসভার সিংবাড়ী এলাকার রফিকুলের নির্মাণাধীন ভবন থেকে চারটি প্লেনসিট চুরি হয়। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার শাহীন, ফয়সাল, মজনু ও সখিপুর উপজেলার পাথার গ্রামের শরিফের নাম ওঠে আসে। এরপর বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে একদল যুবক শাহীন, ফয়সাল ও শরিফকে একটি পিকআপভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে পিকআপভ্যানের মধ্যেই দুই জনকে গানের তালে নাচানো হয়। পরে ওই দিন রাত ১২টার দিকে তাদের তিন জনকে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেনের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

এক পর্যায়ে চুরির সঙ্গে স্থানীয় রিফাতের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসে। এ নিয়ে চুরির সঙ্গে মোট পাঁচ জনের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি জানা যায়। পরে বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকালে বাসাইল পৌরসভার ব্রাহ্মণপাড়িল এলাকার একটি খেলার মাঠে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচ জনের মধ্যে চার জন উপস্থিত হয়। কিন্তু রিফাত নামের ওই যুবক ঢাকায় থাকায় সালিশে উপস্থিত ছিল না। সালিশের শেষ পর্যায়ে মাতবররা সন্দেহভাজন চোরদের মধ্যে চার জনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেন।

সালিশে রিফাত উপস্থিত না থাকায় তাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করায় তার পরিবার সিদ্ধান্তটি মেনে নেয়নি। এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় যুবক জনি, শুভ, লিমন, সাদিক, আশিক, আকাশ, আবির, মারুফসহ আরও কয়েকজন মিলে সালিশে সাইকেলের চেন ও বিদ্যুতের সার্ভিস তার নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় সন্দেহভাজন রিফাতের বাবা ওহাব, তার চাচা রউফ ও সন্দেহভাজন চোর মজনুকে মারধর করে। এ সময় বাঁচাতে গিয়ে ওহাবের স্ত্রী বিউটি বেগমসহ স্থানীয় আরও কয়েকজন আহত হন। স্থানীয় কাউন্সিলর জাকির হোসেনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে আহত অবস্থায় ওহাব, রউফ ও মজনুকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

সালিশি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় আব্দুল হক। এ সময় স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেন, স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর খলিলুর রহমান, সিরাজ মাস্টার ও আজিজুলসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

আহত ওহাব খান বলেন, ‘আমার ছেলে রিফাত চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল না। রিফাত প্রায় এক মাস ধরে ঢাকায়। পরিকল্পিতভাবে তাকে জড়ানো হয়েছে। সালিশে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। কিন্তু আমার ছেলেকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সালিশে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে অতর্কিতভাবে সাইকেলের চেন ও বিদ্যুতের সার্ভিস তার নিয়ে কয়েকজন যুবক হামলা চালায়। বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

আহত মজনু বলেন, ‘একটি বিল্ডিং থেকে আমরা কয়েকজনে মিলে চারটি প্লেনসিট চুরি করেছি। পরে ভাঙারির দোকানে দুই হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। এলাকার অন্য কোনও চুরির সঙ্গে আমরা জড়িত নই। এলাকায় বিভিন্ন সময় চুরির ঘটনার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকারের জন্য কয়েকজন ব্যক্তি চাপ প্রয়োগ করে। গত ৩১ অক্টোবর রাত ১০ টাকার দিকে তিন জনকে ধরে নিয়ে একটি পিকআপভ্যানে করে পাথরঘাটার দিকে নিয়ে যায়। সেখানে পিকআপভ্যানের মধ্যে দুই জনকে গানের তালে নাচানো হয়। সালিশে আমাদের চার জনকে ২০ হাজার টাকা করে ও রিফাতকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। চারটি প্লেনসিটের জন্য এত টাকা জরিমানা করায় প্রতিবাদ করলে কয়েকজনে মিলে আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেন, ‘সালিশি বৈঠকে হামলার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের ওপর হামলা করা ঠিক হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সময় আমিও আঘাত পেয়েছি।’

সালিশি বৈঠক পরিচালনা করা সিরাজ মাস্টার বলেন, ‘এলাকায় চুরির ঘটনায় সালিশি বৈঠকে বসা হয়। সেখানে ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচ জনের মধ্যে চার জনকে ২০ হাজার করে ও একজনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।’

বাসাইল থানার ওসি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’