সুন্দরবনে আবারও জলদস্যু আতঙ্ক: অপরাধী ধরতে ইন্টারপোলের তালিকা

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আটক দুই জলদস্যুসুন্দরবন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক জলদস্যুরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জলদস্যুরা জেলেবহরে হামলা চালিয়ে সর্বস্ব লুট করার পাশাপাশি জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। এদিকে জলদস্যুসহ সব ধরনের অপরাধীকে ধরতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল বেশ কিছু দিক-নির্দেশনাসহ একটি তালিকা তৈরে করে দিয়েছে বন মন্ত্রণলায় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। খুলনা সার্কেলের বনসংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী ও র‌্যাবের খুলনা বিভাগের অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে গত দুই সপ্তাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এসব দস্যুদের ৩টি বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। বন্দুকযুদ্ধের পর তাদের আস্তানা থেকে দুই দফায় অপহৃত ১১ জেলেকে উদ্ধার করা হয়।  

খুলনা সার্কেলের বনসংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী ও র‌্যাবের খুলনা বিভাগের অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, সুন্দরবনে চোরাকারবারি ও সশস্ত্র জলদস্যুদের ধরতে  ইন্টারপোল একটি তালিকা বন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে। কিছু দিক-নির্দেশনাসহ সেই তালিকা  র‌্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কাছেও দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, ইন্টারপোলের দেওয়া তালিকায় বনদস্যুদের পাশাপাশি বনবিভাগ ও পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধির নামও আছে। এ কারণে সতর্কতার সঙ্গে অভিযানের পরিকল্পনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তবে ইন্টারপোলের দেওয়া অপরাধীদের তালিকায় কে কে আছে, সে বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি কোনও সংস্থা। এ বিষয়ে র‌্যাবের খুলনা বিভাগের অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ইন্টারপোলের দেওয়া তালিকা ধরে সুন্দরবনে সতর্কতার সঙ্গে অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

সুন্দরবনের জলদস্যুদের কাছ থেকে উদ্ধার আগ্রেয়াস্ত্রসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা

 

বনবিভাগের কর্মকর্তা আমির হোসাইন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইন্টারপোলের দেওয়া তালিকা অপরাধ দমনে সাহায্য করবে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে সমন্বিতভাবে সুন্দরবনে অপরাধ দমনে কাজ শুরু করা হচ্ছে।’

এদিকে সুন্দরবনে চলমান অভিযানের মধ্যেও জলদস্যুরা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের জেলেরা।  এ প্রসঙ্গে জাতীয় মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, ‘কিছুদিন বনদস্যরা নিষ্ক্রিয় থাকলেও চলতি ইলিশ মৌসুমে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। এখন তারা জেলেবহরে হামলা চালিয়ে জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। এ কারণে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যেতে চাচ্ছেন না।’

সুন্দরবনে গত দুই সপ্তাহে দস্যু ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে  তিনটি বন্দুকযুদ্ধের  ঘটনা ঘটছে।   এ সব ঘটনায় ১১ জন অপহৃত জেলেদের উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বনের চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের পর দুই দস্যুকে আটক করে র‌্যাব।

র‌্যাব-৮ এর সিও লে. কর্নেল আনোয়ার উজ জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এর আগে সুন্দরবনের ১২টি জলদস্যু বাহিনী ১৩২টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ২০১৬ সালের ২৯ মে জলদস্যু মাস্টার বাহিনী প্রথম আত্মসমর্পণ করে। এরপর চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরও ১১টি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। তবে আরও কয়েকটি বাহিনী বনে ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, ওই বাহিনীগুলোও আগামী মাসে আত্মসমর্পণ করবে।’

সুন্দরবনের দস্যুদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে কোস্টগার্ডের সঙ্গেও। গত ৮ আগস্ট বনের শ্যালা নদীতে সুমন বাহিনীর সঙ্গে এবং ১৫ আগস্ট বড়মিয়া বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এ সময় দস্যুরা পালিয়ে যায়, তবে তাদের আস্তনা থেকে অপহৃত ১১ জেলেকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড।

/এমএনএইচ/