খুলনায় শাহজালালের শ্বশুরবাড়িতে হামলা-ভাঙচুর




শাহজালাল (ছবি: খুলনা প্রতিনিধি)চোখ উৎপাটনের শিকার শাহজালালের শ্বশুরবাড়িতে বুধবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এজন্য আঙুল তোলা হচ্ছে থানা আওয়ামী লীগ ও যু্বলীগের নেতাকর্মীদের দিকে। তাদের হামলার কারণেই শাহজালালের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খানের দাবি, পুরনো একটি দেনা-পাওনার বিষয়ে কয়েকজন মহিলা শাহজালালের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ বিষয়ে এখন অনুসন্ধান চলছে। উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম রাতেই খুলনার খালিশপুরের নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির ওই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

শাহজালালের বাবা জাকির হোসেনের অভিযোগ, রাতে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখছিলেন তারা। এর মধ্যে ১০-১২ জন নারী-পুরুষের একটি দল হঠাৎ ঘরে ঢোকে। তারা শাহজালালের নাম ধরে ডেকে বলতে থাকে, ‘আমাদের ছিনতাইকৃত টাকা আর স্বর্ণের চেইনসহ অন্যান্য মালামাল কই।’

এ সময় শাহজালালের স্ত্রী রাহেলা বেগম এগিয়ে গেলে তারা এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। আঘাত করে হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে। রাহেলার মা রানি বেগম, শাহজালালের মা রেনু বেগমসহ পরিবারের অন্যরাও আহত হন। তাদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন তাসলিমা আক্তার লিমা ও মরিয়ম নামে দু’জন আটক হয়। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় যুবলীগের কর্মী নামধারী কয়েকজন এসে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

ঘটনা প্রসঙ্গে খালিশপুর থানা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শারমীন রহমান শিখা বলেছেন, ‘লিমার মেয়ে (সোহেল বিশ্বাসের স্ত্রী) গত ৫ এপ্রিল নগরীর কাস্টমস মোড়ে ছিনতাইকারীদের মুখে পড়ে। পরবর্তীতে ছিনতাই হওয়া মোবাইল শাহজালালের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বুধবার বঙ্গবাসী স্কুলে একটি অনুষ্ঠানে বসে লিমা জানতে পারেন, শাহজালাল শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান করছেন। এ কারণে তিনি লোকজন নিয়ে মালামাল আনতে গিয়েছিলেন।’

অভিযোগ রয়েছে, গত ১৮ জুলাই মো. শাহজালাল রাত ৮টায় নিজের মেয়ের জন্য দুধ কেনার জন্য বাসার পাশ্ববর্তী দোকানে গেলে খালিশপুর থানা পুলিশ তাকে ধরে দেড় লাখ টাকা দাবি করে বলে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহজালালকে বিশ্বরোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে হাত-পা চেপে ধরে ও মুখে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দুটি চোখ উপড়ে ফেলে পুলিশ।

এসব অভিযোগ তুলে শাহজালালের মা রেনু বেগম গত ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে এটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মামলার আসামিরা হলেন— খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম খান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেল, এসআই তাপস রায়, এসআই মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মিজান, এসআই মামুন, এসআই নূর ইসলাম ও এএসআই সৈয়দ সাহেব আলী, আনসার সদস্য (সিপাই) আফসার আলী, আনসার ল্যান্স নায়েক আবুল হোসেন, আনসার নায়েক রেজাউল, খালিশপুর পুরাতন যশোর রোড এলাকার সুমা আক্তার ও শিরোমনি বাদামতলা এলাকার লুৎফুর হাওলাদারের ছেলে রাসেল।

শাহজালালের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে। স্ত্রীকে নিয়ে যেতে খালিসপুরে আসেন তিনি। এর মধ্যে তার পুলিশি হামলার শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠলো। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছে তার পরিবার। এর দুই দিন পর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলো শাহজালালের শ্বশুরবাড়িতে।