প্রতি বছরই অক্টোবর মাস থেকে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের দুবলার চর এলাকায় সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের মৌসুম শুরু হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। ১ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও সুন্দরবনে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২২ দিন পর ফের মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা।
জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য সাগরপাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও আসবেন এখানে। এরইমধ্যে উপকূলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবী দুবলার চর এলাকায় মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। সোমবার ভোরেই মংলা, রামপাল, দাকোপ, শরণখোলা, পাইকগাছা, শ্যামনগরসহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার জেলে নৌকা, ট্রলার ও জাল নিয়ে লোকালয় ত্যাগ করেছে।
পূর্ব সুন্দরবন সদরের এসিএফ (সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা) মো. মেহেদীজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দুই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় নির্ধারণ করে এবার দুবলার চরে শুঁটকি আহরণে শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে ছয় হাজার জেলেকে পারমিট দেওয়া হয়েছে। জেলেদের মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের জন্য তাদের নিরাপত্তাসহ সব রকম ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এসব জেলেদের জন্য চরে ৮৭০টি জেলে ঘর এবং মহাজনের জন্য ৩৮টি ডিপো ঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২৮ ফিট দৈর্ঘ্য এবং ১২ ফিট প্রস্থ নির্ধারণ করে ঘরের মাপও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এর থেকে বড় ঘর তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে দস্যুদের কবল থেকে বাঁচতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জেলে ও মহাজনরা। এ ব্যাপারে মৎস্যজীবীদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিশারম্যান’ গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও জলদস্যুদের উৎপাতের আতঙ্ক মাথায় নিয়েই উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা সাগরে ছুটছেন। জেলেদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দুবলার চরে অবস্থানরত জেলেরা সুন্দরবনের গাছ দিয়ে ঘর তৈরি বা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন না। গত শুঁটকি মৌসুমেও সুন্দরবনের গাছ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি।
বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী জানান, পাস-পারমিট ছাড়া জেলে ও মৎস্যজীবীরা সুন্দরবনে প্রবেশ করলে এবং জেলেদের কাছ থেকে সুন্দরবন বিভাগের কেউ টাকা আদায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে চলতি মৌসুমের শুরুতেই নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।
আরও পড়ুন:
রাজশাহীতে ইলিশ ধরায় ব্যস্ত জেলেরা