কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল, মঙ্গলকোট ও কন্দপপুর এলাকায় গাছের গুঁড়ি ও ডাল থেকে তৈরি হয় ২০-২৫ রকমের তৈজসপত্র। এই তিনটি গ্রামে ছোট-বড় ৫০টি কারখানা রয়েছে। প্রায় ৫০০ বাড়িতে রয়েছে এমন কারখানা। প্রতিটি কারখানায় ১০-২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। বাড়িতেও পরিবারের সদস্যরা এসব তৈজসপত্র তৈরি করে থাকেন।
ইনসার শেখের ছোট ছেলে বখতিয়ার শেখ। তিনি কেশবপুর ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্সের ছাত্র (ফাইনাল ইয়ার)।
বাড়িতে বসে তিনিও এই কাজ করছিলেন। বখতিয়ার বলেন, ‘আমার বাবাই এই অঞ্চলে প্রথম এই শিল্পকর্মটি আনেন। এরপর তা বিস্তৃতি লাভ করে।’ বর্তমানে তিনি ও তার মা সকিনা বেগম এই কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন।
কুটিরশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানীয় আমজাদ আলী সরদার ও ফাতেমা বেগম দম্পতি। তাদের তিন সন্তান আল আমিন, আলিমুন হাসান ও আরিফুল ইসলাম। তারাও এই কাজ করে। আল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে (তৃতীয় বর্ষ) পড়াশুনা করছেন। প্রাইমারি পাস বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার।
ফাতেমা বলেন, ‘বছর ১৫ আগে তারা এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। এর আগে তার স্বামী মাঠে কৃষিকাজ করতেন। সংসার কোনোমতে চলতো। এখন খাওয়া-পরার সমস্যা তেমন নেই। বছর তিন আগে ৫ কাঠা মাঠের জমিও কিনেছেন। কিন্তু ছেলের জন্য ঠিকমতো টাকা পাঠাতে পারেন না। অপর দুই সন্তান সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
এই এলাকার সবচেয়ে বড় কারখানার মালিক কবির হোসেন। তিনি বলেন, এই কুটিরশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে আরও কিছু পেশার মানুষ। যেমন, স-মিল, ভুসি বিক্রেতা, ভ্যান-পিকআপ চালক প্রভৃতি। এ অঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে মালামাল ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। বিদ্যুতের অসহ্য লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা চাহিদা মতো পাইকারদের সরবরাহ করতে পারছি না। আর যারা শ্রমিক, তারাও তাদের কাঙ্ক্ষিত মজুরি পাচ্ছেন না। মোদ্দা কথা, বিদ্যুৎ সরবরাহ যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে আমাদের সবার জন্য উপকার হয়।’
এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি কেশবপুরের তিনটি গ্রামের ৪৫০-৫০০ মানুষ ওই কুটিরশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০-২৫ বছর ধরে তারা এসব উৎপাদন ও বিপণন করে আসছেন। আমাদের বিদ্যুৎ চাহিদা ১০-১২ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ ৬-৭ মেগাওয়াট। ঘাটতি বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে করণীয় বিষয়ে আমরা ভাবছি। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে সোলার প্যানেল কিংবা জেনারেটর দিয়ে এগুলোর সমাধান করা যায় কিনা সেটাও দেখা হবে। তাছাড়া, তাদের জন্যে সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের বিষয়টিও আমাদের চিন্তায় আছে।’