সরেজমিনে দেখা গেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর মাঠগুলোতে এখন শোভা পাচ্ছে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল। কৃষকরা গোলাপের কুঁড়িতে সাদা ক্যাপ পরিয়ে রেখেছেন। এগুলো করা হয়েছে যাতে কুঁড়ি একটু দেরিতে ফোটে। কেননা সামনে রয়েছে ফুলবিক্রির উপযুক্ত সময়। সামনের কয়েকমাসে ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস, ১ জানুয়ারি ইংরেজি নতুন বছর, ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত দিবস, পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ রয়েছে বেশ কয়েকটি বিশেষ দিবস।
ব্যবসায়ী ও ফুলচাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ১৬ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা এবং গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। সামনে বিজয় দিবস, এরপর নতুন বছর এবং ফেব্রুয়ারিতে তিনটি বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে প্রস্তুতি ভালো নিয়েছিলাম। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বুলবুলের কারণে আমরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হই। এখন আশায় বুক বেধেছি- যদি সামনের দিনগুলোতে ভালো দাম পাই, তবে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবো।’
ফুলচাষি আব্দুল গফ্ফার বলেন, ‘এবার তিন বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছি। আগে বিঘাপ্রতি এক থেকে দেড়লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেছি। এখন ৭০ থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত হচ্ছে। ফুলের বাজার এখন বেশ খারাপ। উৎপাদন বেশি হলেও বিক্রি কম হচ্ছে।’
ফুলের বিক্রি ও দাম তুলনামূলক কম পাওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে কৃষক মোমিন হোসেন বলেন, ‘দেশে প্লাস্টিকের ফুল আমদানি ও ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের ফুল বিক্রি বেশ কমে গেছে। এছাড়া যেসব জেলায় আমরা আগে ফুল দিতাম, এখন তারাও উৎপাদন করছেন। ফলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা ফুল সংগ্রহের জন্য আসছেন না। এতে আমরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস্ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ছয় হাজার ফুলচাষি। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত পাঁচটি বিশেষ দিবসকে সামনে রেখেই চাষিরা ফুল চাষ করে থাকেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিকের ফুলের ব্যাপক ব্যবহার, বিরূপ আবহাওয়া, মানসম্পন্ন ফুল উৎপাদন না হওয়া, জেলায় জেলায় ফুলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এবার আমাদের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চাষিরা শঙ্কিত। গতবারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার আমরা বেশ সংশয়ে রয়েছি।’
তিনি জানান, এ বছর ২৭২ হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাস, ১৬৫ হে. জমিতে রজনীগন্ধা, ১০৫ হে. জমিতে গোলাপ, ৫৫ হে. জমিতে গাঁদা, ২২ হে. জমিতে জারবেরা এবং অন্যান্য ফুল চাষ করা হচ্ছে প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। দেশে ফুলের মোট চাহিদার সিংহভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়।