সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার: হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

কয়রা দড়িসুন্দরবনের নদী ও খালগুলো দিন দিন মাছশূন্য হয়ে যাচ্ছে। মাছের সঙ্গে মরছে অন্যান্য জলজ প্রাণীও। জেলেরা বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে হুমকিতে রয়েছে জীববৈচিত্র্য। পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পুলিশের পক্ষ থেকে গত কয়েকদিন ধরে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি। এরমধ্যে নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে ১৭শ’ বর্গকিলোমিটার। এগুলোতে ইলিশ, চিংড়ি, রূপচাঁদাসহ ৪০০ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।

চিংড়ি মাছ দাকোপ

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন খুলনা শাখার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার জানান, একশ্রেণির জেলে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছত্রচ্ছায়ায় নৌকা ও ট্রলার নিয়ে বনের ভেতরে ঢুকে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার করছে। এতে শুধু মাছ নয়, প্রায় সব জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। বিষ দিয়ে মাছ শিকার করায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ফরেস্ট অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফ হাসান লিমন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুন্দরবনের খালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের ফলে পানি বিষাক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বাঘ-হরিণসহ প্রাণিকুলের বড় ক্ষতি হতে পারে। এজন্য সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপের ওপর সংশ্লিষ্টদের জোর দিতে হবে।’

কয়রা থানার মাছ সহ ব্যক্তিদের ছবি

বিষ প্রয়োগে মাছ ধরা বন্ধে তৎপরতা, সুন্দরবনে অবৈধ চোরা শিকারি রুখতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। সম্প্রতি খুলনা জেলা পুলিশ অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করেছে। জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ বিষ, জাল ও নৌকা। খুলনার পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত ১৭ জুলাই চার বোতল কীটনাশকসহ আট জন, ২৮ আগস্ট এক বোতল কীটনাশকসহ দুজন, ২৯ অক্টোবর দুই বোতল কীটনাশকসহ তিন জন, ২৬ নভেম্বর দুই বোতল কীটনাশকসহ তিন জন এবং চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর চার বোতল কীটনাশকসহ নয় জনকে আটক করেন তারা। এ সময় বিপুল পরিমাণ বিষ বা কীটনাশক মিশ্রিত মাছও জব্দ করা হয়। সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদীতে বিষ দিয়ে মাছ শিকার হওয়ার কথা স্বীকার করেন পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এসব মাছ শিকারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের প্রতিটি ক্যাম্প ও স্টেশনের বনরক্ষীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ তবে সুন্দরবনের নদীগুলো মাছশূন্য না হলেও মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।