মানসিক নির্যাতনে কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যুর অভিযোগ

অপমান, অবরুদ্ধ ও মানসিক নির্যাতনে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার বিকালে তার মৃত্যু হয়।

সেলিম হোসেন কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ ছিলেন। তার মৃত্যুর পর কুয়েটের সব ধরনের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

মানসিক নির্যাতনে সেলিম হোসেনের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে বুধবার (১ ডিসেম্বর) ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি লালন শাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান নিজের লোকদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার প্রচেষ্টা চালান। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ৩০ নভেম্বর সেলিম হোসেনের দাফতারিক কক্ষে ঢুকে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতন করেন। 

সেজানসহ উপস্থিত অনেকে তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য সেলিম হোসেনকে বেশ কয়েক দিন ধরে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে সেলিম হোসেনকে জেরা শুরু করেন। পরবর্তীতে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধাঘণ্টা ওই শিক্ষকের কক্ষে ছিলো।

পরে দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বাসায় যান সেলিম। বেলা ২টার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পর সাধারণ ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে অপমৃত্যুর অভিযোগ তোলেন। সেই সঙ্গে সেলিমের কফিনসহ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে যায়। তারা এ সময় বিচারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলা করার দাবি জানান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘ সভা শেষে তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

সেলিম হোসেনের অপমৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষক সমিতি বুধবার (১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় কুয়েট অডিটোরিয়ামে জরুরি সভা করে। শিক্ষক সমিতির সভা থেকে বুধবার রাত ১২টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং ওই ঘটনার বিচার দাবি করা হয়।