শিক্ষককে লাঞ্ছনা: ৩ জনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেফতার তিন জনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিকালে নড়াইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে তাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। বুধবার (২৯ জুন) রিমান্ড শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহমুদুর রহমান।   

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষককে লাঞ্ছনা, কলেজে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারে ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ওই এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তবে নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। আগে গ্রেফতার তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর ৯ দিন পর মামলা, গ্রেফতার ৩

নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘ঘটনার দিন কলেজ প্রাঙ্গণের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ওই এলাকার উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ লেগেছিল। বিনা রক্তপাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছিলাম আমরা। বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে নড়াইল সদর থানার এসআই মোরসালিন মামলা করেছেন। মামলায় শাওন (২৮), সৈয়দ রিমন আলী (২২) ও মনিরুল ইসলাম রুবেল (২৭) নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড চেয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই শিক্ষক নিরাপদে রয়েছেন।’

প্রবীর কুমার রায় বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। তিন জন ছাড়াও আর কে কে ঘটনায় জড়িত, তা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন: ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্টের জেরে কলেজে হামলা, তদন্তে কমিটি 

এদিকে, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। নড়াইলের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আসলে সেদিন কি ঘটেছিল, তা উদঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে। বাকি দুজন হলেন- জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান ও নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীর। কমিটি ৩০ জুন প্রতিবেদন জমা দেবে। সার্বিক পরিস্থিতি প্রশাসনের নজরদারিতে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে শিক্ষককে লাঞ্ছনাসহ তিনটি ধারায় নিয়মিত মামলা করেছে পুলিশ। তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার জড়িত অন্যদের শনাক্তের কাজ চলছে। শিক্ষকের মানসিক অবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন স্বাভাবিক রয়েছেন। কলেজটি ঈদুল আজহা পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন: ফেসবুকে পোস্ট নিয়ে বিতর্ক, নড়াইলের সেই কলেজছাত্র কারাগারে

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক আইডি থেকে ভারতের রাজনীতিবিদ নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে তার বিতর্কিত মন্তব্যকে সমর্থন জানান। পোস্ট দেওয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে ওই শিক্ষার্থী কলেজে আসেন। তখন তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বলেন। কিন্তু মোছেননি। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জানান। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষকদের পরামর্শে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তারা কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন।

আরও পড়ুন: অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনা: দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় পরিবার

এরপর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। এ সময় ১০ জন আহত হন। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।