মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার দাবি

খুলনার দৌলতপুরের রহিমা বেগমের ‘অপহরণের’ ঘটনাকে ‘সাজানো নাটক’ আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপনে ছিলেন রহিমা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপহরণ নাটকের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা। 

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন গ্রেফতার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তারা বলেন, গ্রেফতারকৃত পাঁচ জনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে আগামীকাল বুধবার বেলা ১১টায় ফুলবাড়ি গেটে মানববন্ধন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনায় করা মামলার আসামি মো. মহিউদ্দীনের মেয়ে মালিহা মহিউদ্দিন। 

সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, রহিমা অপহরণ নাটক সাজিয়ে একই এলাকার পাঁচ জনক অন্যায়ভাবে জেল খাটানো হচ্ছে। এর প্রতিবাদ ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে অপহরণের নাটকের মাস্টারমাইন্ড মরিয়ম মান্নানসহ জড়িত তার পরিবারের অন্য সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে মূল ঘটনা উদঘাটন এবং ন্যায় বিচারে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিস্টদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

আরও দাবি করা হয়েছে, রহিমা বেগম ও তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। রহিমার শরিকদের চার শতক জমি ক্রয় যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার তদন্তে যখন নির্দোষ প্রমাণ হয়েছে, তখন নতুন করে রহিমা বেগম গুম/নিখোঁজ কাহিনী সাজিয়ে মামলা করেন। রহিমার মেয়ে আদুরী আক্তার বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হলেও প্রতিবেশী পাঁচটি পরিবার খানাবাড়ি এলাকার মো. মহিউদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, মো. জুয়েল ও হেলাল শরীফকে মিথ্যা অভিযোগে জেল খাটাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রহিমা উদ্ধার হওয়ার পর প্রশাসন সাংবাদিকদের সামনে মুখে কুলুপ আঁটলেও আদালতে গিয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। নতুন করে আবার নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিশ্বাস করি, নতুন করে নাটক সাজানোর চেষ্টা সফল হবে না।

নিখোঁজের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার রফিকুল ইসলাম পলাশের স্ত্রী মরিয়াম হাসনাত মৌ বলেন, তার স্বামী সরকারি চাকরি করেন। প্রতিবেশী হওয়ায় তার জমির কিছু অংশে ঘিরে দেওয়ার প্রতিবাদ জানালেই রহিমা ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা করেন। এখন ছোট সন্তানকে নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন মৌ। এর বিচার ও স্বামীর মুক্তি দাবি করেছেন তিনি।

স্থানীয় মেম্বার মামুন হাসান বলেন, ‘আমার বন্ধু পলাশের সঙ্গে আদালতে কথা বলায় মরিয়ম মান্নান আমাকে  দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েচেন। তারা প্রত্যেকটা পরিবারের নামে মামলা দিয়েছে। সীমানা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে তিন বছর আগে প্রতিবেশী শুকুর আলী ও তার আট বছরের সন্তান শরীফুলের নামে ধর্ষণের মামলা দেয়।’

জেলে থাকা মো. মহিউদ্দিনের খালাতো ভাই বাদশা নজরুল বলেন, ‘যারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে তাদের বিচার চাই। আর নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি চাই।’

জেলে থাকা হেলাল শরীফের মেয়ে অন্তরা বলেন, ‘মিথ্যা মামলা থেকে সবাইকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অপহরণ মামলায় গ্রেফতার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া ও নুরুল আলম ওরফে জুয়েলের পরিবারের সদস্যরা। তারা খুলনা পৌর শহরের দৌলতপুরের থানাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা।

আরও খবর:

জমি নিয়ে বিরোধেই রহিমা নিখোঁজ?

এতদিন কোথায় ছিলেন রহিমা?