খুলনায় বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৩৬ শতাংশ, উদ্বেগ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের

খুলনায় করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮০ শতাংশ ও দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৭১ শতাংশ। এ হার সন্তোষজনক। তবে বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৩৬ শতাংশ। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফরত সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণরোধে গত দেড় বছরে খুলনায় আট হাজার ৬৮১ ডোজ টিকা অপচয় হয়েছে। প্রতিটি অ্যামপুলের দশ ডোজ সম্পূর্ণ ব্যবহার না হওয়ায় অপচয়ের প্রধান কারণ। অপচয় বেশি হয়েছে মডার্নার টিকা। মডার্নার অপচয়কৃত টিকার পরিমাণ তিন হাজার ৩০ ডোজ।

খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, শুরু থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই হাজার ৩৯৯ ডোজ, সিনোফার্মের দুই হাজার ৩৫ ডোজ, মডার্নার তিন হাজার ৩০ ডোজ, ফাইজারের ১৬৬ ডোজ, শিশুদের সিনোভ্যাক্সের ৩৩ ডোজ এবং ফাইজারের এক হাজার ১৮ ডোজ অপচয় হয়েছে।

বর্তমানে খুলনায় করোনার বিভিন্ন ধরনের এক লাখ ১১ হাজার ৩৩৮ ডোজ টিকা মজুত রয়েছে। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৪ হাজার ১৩৪ ডোজ, সিনোফার্মের ২৯ হাজার ৩৪৩ ডোজ, ফাইজারের ১৪ হাজার ৮৯ ডোজ, জনসনের চার হাজার ৭০০ ডোজ, শিশুদের সিনোভ্যাক্সের ৩৬ হাজার ৩০২ ডোজ এবং ফাইজার (শিশু) ১২ হাজার ৭৭০ ডোজ টিকা বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মজুত আছে।

খুলনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মো. ছাবেতুল ইসলাম বলেন, ‘খুলনায় ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪১ বাসিন্দা রয়েছেন। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় সাত লাখ ১৮ হাজার ৭৩৫ জন ও জেলার ৯ উপজেলায় ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন রয়েছেন। তাদের জন্য এ পর্যন্ত ৫১ লাখ ৪২ হাজার ৩৪৯ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫০ লাখ ২২ হাজার ৩৩০ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২১ লাখ ৪০ হাজার ২৫৩ জন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৯ লাখ সাত হাজার ৮৫৫ জন এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৯ লাখ ৭৪ হাজার ২২২ জন। প্রথম ডোজ নেওয়ার হার ৮০ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার হার ৭১ শতাংশ। বুস্টার ডোজ নেওয়ার হার ৩৬ শতাংশ। টিকা দেওয়ার সময় আট হাজার ৬৮১ ডোজ অপচয় হয়েছে। এখনও মজুত রয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৩৩৮ ডোজ। জেলার ৯ উপজেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, নগর স্বাস্থ্য ভবন, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আবু নাসের হাসপাতাল, পুলিশ হাসপাতাল, তালতলা হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে টিকা মজুত রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে অপচয়ের সুযোগ কম। একটি অ্যামপুলে ১০ ডোজ থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে আট জন গ্রহণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে টিকা গ্রহণকারী না আসায় প্রতিটি অ্যামপুল থেকে দুই ডোজ করে অপচয় হয়েছে। অন্য কোনও উপায়ে অপচয়ের সুযোগ নেই। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিন হাজার ২৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আক্রান্ত হন এক লাখ ৩১ হাজার ১৫৩ জন।’

এদিকে, বুস্টার ডোজ গ্রহণের হার বাড়াতে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত শনিবার হাঙ্গার প্রজেক্টের আয়োজনে স্কুল হেলথ ক্লিনিকে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. ফাহরীন ফাতমী জাহান, ডা. মো. ছাবেতুল ইসলাম, স্কুল হেলথ ক্লিনিকের মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. নারগিস সুলতানা ও খুলনা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের প্রশিক্ষক মাহমুদা আক্তার। সভায় বুস্টার ডোজ গ্রহণে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর ওপর জোর দেন আলোচকরা।