দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ

সুন্দরবনের দুবলার চরে আজ থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হচ্ছে। তবে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে এই সময়ে এবারও পুণ্যার্থী ছাড়া অন্যদের সুন্দরবনে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উৎসবকে ঘিরে হচ্ছে না রাসমেলাও। 

আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এই ‘রাস পূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ অনুষ্ঠিত হবে।  আজ সন্ধ্যায় দুবলার চরের মন্দিরে সন্ধ্যা পূজার মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হবে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তথ্যমতে, রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসব পালন করে থাকেন। তারা বঙ্গপসাগরের চর আলোরকোল এলাকায় বসে পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করেন, যাতে সব পাপ মোচন হয়ে যায়।

যদিও, ‘রাস-লীলা’ নিয়ে বেশকিছু মত প্রচলিত আছে। এর মধ্যে বহুল জনপ্রিয় দুটি মতো। এই দুই মতেই কেন এই রাস-লীলা তার ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। কথিত আছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ পাপমোচন ও পূর্ণলাভে গঙ্গাস্নানের স্বপ্নাদেশ পান। এই থেকেই শুরু হয় ‘রাস উৎসব’। আবার অন্য মতালম্বীদের মতে, দুর্গাপূজার পর পূর্ণিমাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে ‘লীলায়’ মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। আর সেই থেকেই কার্তিক মাসের পূর্ণিমাতে ‘রাস-লীলা’ পালিত হয়ে আসছে।

হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণের হাজার হাজার মানুষ এই উৎসবে হাজির হন। প্রতিবছর এই উৎসবে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সুন্দরবনে রাস উৎসব হয়নি। আর করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকে রাস উৎসবে কোনও মেলার আয়োজন করা হয়নি। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত ছিল শুধু হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য।

রাস উৎসব বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দিন জানান, ‘করোনা সংক্রমণ এড়াতে এবারও খুবই স্বল্প পরিসরে রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি এ বছর সবার সহযোগিতায় আমরা সুষ্ঠুভাবে এই উৎসব সম্পূর্ণ করবো।’

সুন্দরবন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতে তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এসব পথে বন বিভাগ, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

তিনি আরও জানান, আজ দিনের বেলায় যাত্রা শুরু করতে হবে এবং নৌযানগুলো কেবল দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রঙ দিয়ে বিএলসি অথবা সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস্থানকালীন টোকেন ও টিকিট কাছে রাখতে হবে। রাসপূর্ণিমা পুণ্যস্নানের সময় কোনও বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারও কাছে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ট্রলারে কোনও প্লাস্টিকের খাবারের প্লেট বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যস্নান স্থানে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ফোটানোসহ কোনও প্রকার শব্দ দূষণ করা যাবে না। রাস পূর্ণিমায় আসা পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রাপ্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে।