‘গাছ হইছে মোটাতাজা আর অনেক উঁচা, কিন্তু ফুল আসছে কম। গাছে টমোটোর ফলন নাই বললেই চলে। এখন লাভ তো দূরে থাক খরচাই উঠব না।’ বাংলা ট্রিবিউনকে এভাবেই কষ্টের কথা জানান ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোরোরচর কুষ্টিয়াপাড়ার টমোটো চাষি সাইফুল ইসলাম।
শুধু সাইফুল নন, সদর উপজেলার বোররচর, বাঘেরকান্দা, কাচারিপাড়াসহ চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে টমেটো ক্ষেতে শুধু গাছ, তাতে টমেটোর ফলন নেই। টমেটোর ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার চাষি। এতে চাষীদের আর্থিক ক্ষতির অঙ্ক কমপক্ষে অর্ধশত কোটি টাকার মতো হবে মনে করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় চাষিরা জানান, এই সময়ে (ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে) টমেটো গাছ ফুল আর ফলে ভরে যায়। মাঠজুড়ে টমেটো উত্তোলনের ধুম পড়ে। প্রতিদিনই কমপক্ষে শতাধিক ট্রাক টমেটোসহ নানা সবজি নিয়ে যায় আড়ত থেকে। গতবছর একশ’ কোটি টাকার ওপরে সবজি আড়তে বেচাকেনা হয়েছে বলেও জানান চাষীরা।
বোররচরের চাষি হারুন জানান, বোররচর, বাঘেরকান্দা ও কাচারিপাড়া গ্রামে এবার এফ-১ হাইব্রিড ‘কনক’, ‘রাজা-১’ ও ‘মঙ্গলরাজা’ জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। এরমধ্যে যারা ‘কনক’ ও ‘রাজা-১’ চাষ করেছেন তারাই বেশি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন।
বোররচর বাজারের ডিলার নুরুল ইসলাম জানান, গতবছর বাম্পার ফলন পেয়ে চাষিরা এবার তার নিকট থেকে এফ-১ হাইব্রিড ‘কনক’ জাতের ১ হাজার ২০০ প্যাকেট বীজ নিয়েছেন। প্রতি প্যাকেট বীজে ২২ শতাংশ জমি আবাদ করা হয়। চাষীদের কাছে তার বীজ, সার ও কীটনাশক বাবদ বকেয়া পড়েছে প্রায় অর্ধকোটির ওপরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর প্রায় ১১শ’ হেক্টর জমিতে টমেটো আবাদ করে লাভবান হয়েছিল চাষীরা। এবছর ৬০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ করা হয়েছে। টমেটো চাষে বিপর্যয়ের কথা স্বীকার করে জেলা কৃষি খামারবাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আলতাবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মোটাতাজা হয়ে গাছ বড় হয়েছে, তবে ফুল ও টমেটোর ফলন কম দেখা যাচ্ছে।
জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ফলন আসছে না জানিয়ে এই কৃষিবিদ বলেন, ‘চাষিদেরকে ক্ষেতে পটাশ সার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তবে খারাপ বীজের কারণেও সমস্যা হতে পারে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’
এ ব্যাপারে বীজ প্রতিষ্ঠান অ্যাগ্রিকনসার্ন লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাজী মাহবুব মোরশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ময়মনসিংহ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ ও ভৈরবে ‘কনক’ টমেটো চাষে ফলন বিপর্যয় হয়েছে। চাষীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
/এমও/