ময়মনসিংহ মেডিক্যালে নামকাওয়াস্তে করোনার আইসিইউ সেবা!

“ডাক্তার, নার্স রোগীর কাছে আসে না। দূর থেকে সেবা দেন। নার্স প্রয়োজনীয় ওষুধ কাগজে পেঁচিয়ে রোগীর স্বজনদের দিয়ে যান। প্রস্রাব, পায়খানা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগী বেডে শুয়ে থাকলেও কেউ খোঁজ নেন না। রোগীর স্বজনরা দিনে তিনবার গিয়ে পায়খানা-প্রস্রাব পরিষ্কার ও ওষুধপত্র খাওয়ানোর কাজ করেন। নার্স, আয়া ও ওয়ার্ডবয়দের চাহিদার টাকা দিলে অনেক সময় সেবা মিলে। আর দিনে-রাতে অপেক্ষা করেও ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় না রোগীর স্বজনদের।”

আক্ষেপ নিয়ে এভাবেই ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) চিকিৎসা সেবার কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের বৈলর এলাকার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মোহাম্মদ আলীর (৭১) ছেলে আবু রায়হান।

ময়মনসিংহ মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে ৫ জনের মৃত্যু

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করার পর রোগীর স্বজনরা খুব অসহায় বোধ করেন। নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা তো নিজেদের ডাক্তার মনে করেন। তবে টাকা-পয়সা দিলে কিংবা ডাক্তারের আত্মীয় পরিচয় থাকলে ওই রোগীর সেবা তবু কিছুটা মিলে।

আইসিইউতে ভর্তি জামালপুরের মেলান্দহের আব্দুর রহিমের (৭০) ছেলে সানোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ৯টা, দুপুর দেড়টা ও রাত ৯টার সময় তিনবেলা রোগীর লোকজন আইসিইউর ভেতরে গিয়ে রোগীকে খাবার খাওয়ানো, ওষুধ খাওয়ানোসহ অন্যান্য কাজ করেন। নার্স ও আয়ারা রোগীর কাছে খুব একটা আসেন না।

তিনি আরও জানান, ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা বলে আপনার রোগীকে সেবা দেবো, তাহলে টাকা দিবেন না কেন। আইসিইউ বলতে যে ধরনের সেবা প্রত্যাশা করা হয়, এখানে সেই সেবা পাওয়া যায় না দাবি করে তিনি আরও জানান, ওষুধপত্র হাসপাতাল থেকেই দিচ্ছে। তবে মাঝে মধ্যে কিছু ইনজেকশন সাপ্লাই নাই, সেটা বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।

এদিকে আইসিইউর অব্যবস্থাপনার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগীর স্বজন জানান, কয়েকদিন আগে এক নারী রোগী মারা যাওয়ার পর কর্তব্যরত নার্সকে জানানো হয়। তবে ওই নার্স তাদের বসার আসন থেকে না এসে জবাব দেন, রোগীর অক্সিজেন চলছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর আবারও ওই নার্সকে আসতে বললে তিনি এসে দেখেন ওই রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন।

তিনি আরও জানান, আইসিইউ হলো নামকাওয়াস্তে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। এখানে চিকিৎসককে কিছু বলা যায় না। একবারের জায়গায় দুইবার বললে চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসার বিষয়টা আমরা ভালো বুঝি।

মেয়াদোত্তীর্ণ মানহীন টেস্টিং কিট ও রিএজেন্ট ব্যবহার

তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দীন ফরাজী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আইসিইউতে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। কোভিডের কারণে পিপিই, মাস্ক পরে চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণে রোগীর স্বজনরা হয়তো তাদের চিনতে পারেন না। করোনাভাইরাসের ভয় সবারই আছে। এ কারণে একেবারে কাছে গিয়ে হয়তোবা চিকিৎসা দিচ্ছেন না চিকিৎসক ও নার্সরা। তবে এখানে অনৈতিক টাকা নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করোনা মহামারির সময় ময়মনসিংহ বিভাগের ক্রিটিক্যাল রোগীদের একমাত্র ভরসা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। বর্তমানে এখানে কোভিড আইসিইউর ১৩টি বেডে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।