৬৭ বছর বয়সে দিচ্ছেন এসএসসি, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে লিখেছেন ২৭ কবিতা

নিজের ইচ্ছে পূরণ করতে ৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ (৬৭) নামে এক বৃদ্ধ। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে দুই বিষয়ের পরীক্ষাও দিয়েছেন। বাকি রয়েছে আরেকটি। সেটি আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর। ছেলেরা প্রকৌশলী ও অধ্যাপক হলেও স্কুল বেঞ্চে বসে বাবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ায় ঘটনা এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

তার বাড়ি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের লংগরপাড়া গ্রামে। কিশোর বয়সে পরিবার অভাবে থাকায় বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি। তবে নিজের তিন ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় পড়িয়েছেন। তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে ইংরেজির শিক্ষক, মেজো ছেলেকে কামিল পাস ও ছোট ছেলে প্রকৌশলী। এবার তিনি এসএসসি পাসের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার এমন আগ্রহে পড়ালেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার তরুণরা।

জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদ লংগরপাড়ার মৃত আব্দুল রশিদ মন্ডলের ছেলে। ১৯৭৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। আর্থিক অনটনের কারণে পরীক্ষা না দিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানে থাকেন ২২ বছর। ঢাকায় থেকে বিয়ে করেন তিনি। তারপর সৌদি আরবে যান। প্রবাসে কাটান দীর্ঘ ১৮ বছর। বাড়ি ফিরে সাংসারিক কাজের ফাঁকে শুরু করেন লেখালেখি। ইতিমধ্যে তিনি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান। এর মধ্যে দেহদাহ ও দেশরত্ব নামে দুইটি কবিতার বইও প্রকাশ করেছেন।

আবুল কালাম আজাদ জানান, ১৯৭৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ১৯৭৪ সালে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ায় অভাবের কারণে পড়তে পারেনি। পরিবার চালাতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। চলে আসেন ঢাকায়। এখানে এসেও পড়ালেখা করতে চেয়েছেন। তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পরে ঢাকা থেকে সৌদি আরব চলে যান।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি কবিতা লিখেছি। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছি পাঁচটি। আমি চাই, আমার লেখা কবিতা যেন প্রধানমন্ত্রী হাতে পৌঁছায়- সে জন্য সুযোগ চাই।’

ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন তিনি শিক্ষিত হবেন। এ কারণে শেষ বয়সে ছেলেদের সহযোগিতায় শুরু করেন পড়ালেখা। এবার তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।

নতুন করে পড়ালেখা করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কালাম বলেন, ‘এলাকার অনেকেই প্রথম হাসাহাসি করলেও এখন আর কেউ এমন করে না। আর শিক্ষার কোনও বয়স নেই।’

মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা সংসার জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। এই কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা করতে পারেননি। শেষ বয়সে তার চাওয়া পূরণ করতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। আমার বাবা এখন পর্যন্ত প্রায় আট হাজার গান, কবিতা ও ছাড়া লিখেছেন।’

স্থানীয় তরুণ রাজিব বলেন, ‘আমরা তরুণ বয়সেও পড়ালেখা করতেই চাই না। আর আবুল কালাম দাদা বৃদ্ধ বয়সে পড়ালেখা করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তার মাধ্যমে আমরাও পড়ালেখার প্রতি মনযোগী হবো।’

খড়িয়া কাজীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে লেখা কবিতার বই প্রকাশ করে এলাকায় প্রশংসিত হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। গ্রামে তিনি কবি কালাম নামে অধিক পরিচিত। এই বয়সে এসে ধৈর্যের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন- এ কারণে আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত।’

শ্রীবরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আলম তালুকদার বলেন, ‘তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, শিক্ষার কোনও বয়স নেই। এই ঘটনা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এখন পর্যন্ত তিনটি বই রচনা করেছেন- যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’