শিল্পী-সংকটে ভুগছে ময়মনসিংহের নাট্য দলগুলো

নানা সংকটের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে ময়মনসিংহের নাট্যদলগুলো।মহামারি করোনার ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। করোনার সময় নাটক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম বন্ধ ও শিল্পীরা অন্য পেশায় চলে যাওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে অভিনয়শিল্পীর সংকটে ভুগছে দলগুলো।

তবে করোনার সংকট কেটে যাওয়ার পর আবারও নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানালেন নাট্যদলগুলোর পরিচালকরা। তারা বলেছেন, দলগুলোর আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নতুন শিল্পী খুঁজছেন। ইতোমধ্যে যে কয়েকজন নতুন শিল্পী পাওয়া গেছে, তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭টি নাট্যদল কাজ করছে। করোনা মহামারির সময় বেশিরভাগ দল নাটক পরিবেশনসহ তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। করোনার সংকট কেটে যাওয়ায় নতুন আঙ্গিকে কাজ শুরু করেছে তারা। তবে এখন কাজে আগের মতো আগ্রহ নেই শিল্পী ও পরিচালকদের। অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। হাতেগোনা দু’একটি দল বছরজুড়ে নাটক পরিবেশনসহ নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ দল দিবসকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান করছে।

শিল্পী-সংকটের জন্য করোনাকে দায়ী করছেন অনসাম্বল নাট্য সংস্থার পরিচালক আবুল মনসুর। তিনি বলেন, ‘করোনার আগে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ময়মনসিংহের নাট্যদলগুলোর কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো। শিল্পীদের মাঝে ছিল চাঙা মনোবল। করোনার সংকটে দীর্ঘদিন নাটক পরিবেশনসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েন শিল্পীরা। মূলত এই কারণে শিল্পী সংকট। সেই ধকল এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি আমরা। তবে নতুন শিল্পী যুক্ত করার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আবার নতুনদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’ 

আবুল মনসুর আরও বলেন, ‘ময়মনসিংহের কৃতিসন্তান কে এম খালিদ সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের মাঝে আশার আলো দেখা দিয়েছিল। ময়মনসিংহে সাংস্কৃতিক পল্লী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। সেইসঙ্গে প্রত্যেক নাট্যদলকে একটি প্ল্যাটফর্মে আনার কথা বলেছেন। কিন্তু চার বছর পার হয়ে গেলেও এখনও সাংস্কৃতিক পল্লী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে আমরা হতাশ।’
 
করোনার সময় নাট্যদলগুলো ও শিল্পীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ লোক কৃষ্টি নাট্য সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘নাট্য দলগুলোর নিজস্ব কোনও কার্যালয় নেই। এত বছর আমরা বিচ্ছিন্নভাবে কার্যক্রম চালিয়েছি। কিন্তু করোনা আমাদের সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এখন কে কোথায় আছে, তাও জানা নেই। শিল্পী-সংকটের পাশাপাশি অর্থ-সংকটে আছেন অনেক পরিচালক। সবমিলিয়ে কোনোমতে এখন আমাদের কার্যক্রম চলছে।’

বহুরূপী নাট্য সংস্থা

আবুল কাশেম বলেন, ‘বেশিরভাগ নাট্যদল ভাসমান অবস্থায় কার্যক্রম চালাচ্ছে। নাটক করতে গেলে প্রস্তুতি হিসেবে রিহার্সালের প্রয়োজন হয়। নিজস্ব কার্যালয় এবং হলরুম না থাকায় নতুনদের ঠিকমতো প্রশিক্ষণও দেওয়া যাচ্ছে না। আদৌ এই সংকট কাটবে কিনা, তা আমার জানা নেই।’

করোনা-পরবর্তী সংকটের কারণে নাট্যদলগুলোর খারাপ সময় চলছে বলে জানালেন ময়মনসিংহ থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও বহুরূপী নাট্য সংস্থার সচিব নাট্য ব্যক্তিত্ব শাহাদাৎ হোসেন খান হিলো। তিনি বলেন, ‘বছরে একবার সরকারিভাবে নাট্য দলগুলোকে কিছু অনুদান দেওয়া হয়। তবে বেসরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোনও সহায়তা পাওয়া যায় না। ফলে নিজেদের অর্থ খরচ করে নাটক মঞ্চায়ন করতে হয়। এরপরও সংস্কৃতি অঙ্গনকে চাঙা করার জন্য তৎপর আছেন নাট্যকর্মী ও পরিচালকরা।’

ময়মনসিংহে সাংস্কৃতিক পল্লী গড়ে তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংস্কৃতি পল্লী গড়ে তোলার জন্য ডিজাইনের কাজ শেষ করে প্ল্যানিং কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে বরাদ্দের জন্য একনেকে পাঠানো হবে। সংস্কৃতি পল্লী গড়ে উঠলে নাট্যকর্মীরা সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। আবারও আগের মতো থিয়েটারের যৌবন ফিরে আসবে।’