৫৪ ধারায় গ্রেফতার অধিকারকর্মী জামিনে মুক্ত, সাইবার আইনে নতুন মামলা

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন এবং মেয়রের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ময়মনসিংহের তরুণ কবি, অধিকারকর্মী ও গ্রাফিকস ডিজাইনার শামীম আশরাফ জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার(২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ময়মনসিংহের ৩ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক তাজুল ইসলাম সোহাগ শামীমের জামিন মঞ্জুর করেন।

এদিকে, ৫৪ ধারায় শামীম আশরাফের জামিন হলেও ময়মনসিংহের ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল জজ আদালতে আরও একটি মামলা করা হয়েছে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার নন্দী বাদী হয়ে মঙ্গলবার সাইবার নিরাপত্তা আইনে এ মামলা করেন।

মামলার বিষয়ে কাঞ্চন কুমার নন্দী বলেন, মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত।’

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গ্রাফিকস ডিজাইনার শামীম আশরাফ গত ৭ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুমতি ছাড়া ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমুলক পোস্টার ডিজাইন করেন এবং সেসব পোস্টার নগরের বিভিন্ন এলাকায় সাঁটানো হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি সিটি করপোরেশন বিষয়টি নিশ্চিত হয়। রবিবার রাতে পুলিশ ৫৪ ধারায় শামীম আশরাফকে   গ্রেফতার করে। এ সময় তার ব্যবহৃত কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসে অপপ্রচারমূলক পোস্টারের ডিজাইন পাওয়া যায়। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ১৭, ১৯, ২৫, ২৬, ২৭, ২৯ ও ৩২ ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষে মামলার আইনজীবী সাব্বির তালুকদার বলেন, ‘ময়মনসিংহ সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক বজলুর রহমান আবেদনটি আমলে নিয়ে যেকোনো তদন্তকারী সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী বৃহস্পতিবার মামলার বিষয়টি আরও সুনির্দিষ্ট হবে।’

শামীম আশরাফ তরুণ কবি এবং পেশায় গ্রাফিকস ডিজাইনার। ময়মনসিংহ নগরেই তার বসবাস। নগরের আঠারোবাড়ি বিল্ডিং এলাকায় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম ‘গ্রাফিটি’। শামীম আশরাফ ময়মনসিংহের বিভিন্ন ধরনের নাগরিক আন্দোলনের পরিচিত মুখ। গত বছরের মে মাসে ব্রহ্মপুত্র নদ খননের অনিয়মের প্রতিবাদে তার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় মৃতের চিৎকার নামের এক প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও ময়মনসিংহ নগরের যানজট, জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা নিয়ে তিনি নিয়মিত সোচ্চার থাকেন। গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ করায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার সঙ্গে শামীম আশরাফের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের লোগো ব্যবহার করে বেনামি পোস্টার করেন। ওই সব পোস্টারের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেন।

রবিবার রাতে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিনসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম আশরাফের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গ্রাফিটিতে গিয়ে পোস্টার কেন ডিজাইন করেন এবং কার পক্ষ হয়ে করেন বলে জেরা করেন। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশ শামীমকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ শামীম আশরাফকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার আগের ঘটনা নিয়ে ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

রবিবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আল আমিন গ্রাফিটিতে গিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি লাইভ প্রচার করেন। সেখানে দেখা যায়, শামীম আশরাফকে এ ধরনের অপপ্রচার না করার অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে গ্রাফিটিতে যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক মেয়র ইকরামুল হকের বড় ভাই আমিনুল হক। আমিনুল হক শামীম আশরাফের সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় তিনি শামীমকে জিজ্ঞাসা করেন, কার পক্ষে এসব পোস্টারের ডিজাইন করা হয়?

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর শামীম আশরাফকে আটক করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। পরে সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালত জামিন শুনানি পিছিয়ে মঙ্গলবার ধার্য করেন। দুপুরে আদালত শামীম আশরাফের জামিন মঞ্জুর করলে বিকালে তিনি ময়মনসিংহ কারাগার থেকে মুক্তি পান।