তুচ্ছ ঘটনায় রোগীর স্বজনকে মারধরের অভিযোগ

 বগুড়ায় শজিমেক হাসপাতালে মৃত রোগী আলাউদ্দিন সরকার

একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে রোগীর স্বজনদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আলাউদ্দিন সরকার (৬২) নামে এক রোগীর স্বজনরা। ঘটনাটি সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ঘটে বলে জানান রোগীর স্বজনরা। পরে ডাক্তারদের অবহেলায় আলাউদ্দিনের মৃত্যু হয় বলে তারা অভিযোগ করেন। শজিমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ আহসান বলেছেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের কোনাগাতি গ্রামে গিয়ে আলাউদ্দিন সরকারের ছেলে আব্দুর রউফের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় বাবাকে শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বগুড়া মেডিক্যালে (শজিমেক) ভর্তি করি। বেড না পাওয়ায় মেডিসিন বিভাগের ৪৭৫ নম্বর রুমের মেঝেতে ছিল বাবা। এসময় মাথার উপর ফ্যান চলায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আমি কর্তব্যরত ইন্টার্ন ডাক্তার নাজকে ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করে জানতে চাই ফ্যানের সুইচটা কোথায়। এতে ডাক্তার নাজ রেগে যান।’
রউফ বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে অন্য একজন ইন্টার্ন ডাক্তার নাজের উদ্দিন ওয়ার্ডে ঢুকে তাকে কিলঘুষি মারতে থাকেন। তাকে একশবার কান ধরে উঠবস করানোও হয়। ঘটনাটি জানাজানি হলে সন্ধ্যায় পরিচালকের কক্ষে বৈঠক হয়। বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য উল্টো কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুমকি দেয়। বৈঠকে উপস্থিত রউফের বোন বিনা ও সেতু সুষ্ঠু বিচার না হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ করা হবে বললে ইন্টার্ন ডাক্তাররা ক্ষিপ্ত হয়ে রউফ ও তার বোনদের বেধড়ক কিলঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন।

 

মৃত আলাউদ্দিনের স্বজনেরা

আলাউদ্দিনের সঙ্গে থাকা ছেলের বউ হাসিনা খাতুন বলেন, ‘রউফকে মারপিটের পর যখন অন্য রুমে নিয়ে আটকে রাখা হয়, তখন হাসপাতালে থাকা ননদ জামাই মালেক, দেবর মাসুম ও আরেক দেবর কিবরিয়া এর প্রতিবাদ করায় তাদেরও মারপিট করা হয়।’
রোগীর ভাগ্নে আহত মাসুম বলেন, ‘মারধরের কারণে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফুলে গেছে। কিবরিয়ার মাথা ফেটে গেছে। আর মালেককে শুধু মারপিটই করা হয়নি, তার শরীরের কয়েকটি স্থানে সুঁচ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
মাসুম আরও বলেন, ‘সন্ধ্যায় পরিচালকের রুমে বৈঠকে মারধরের খবর ছড়িয়ে পড়লে ডাক্তাররা তড়িঘড়ি করে মামাকে (আলাউদ্দিন সরকার) আইসিইউতে নিয়ে যান। আমাদের ধারণা তার আগেই মামা মারা গিয়েছিলেন। আইসিইউতে নিয়ে চিকিৎসার নামে ডাক্তাররা তাকে নিয়ে নাটক করেছেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ আহসান মোবাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভর্তির আগে থেকেই রোগীর তেমন রেসপন্স ছিল না। জীবিত অবস্থাতেই তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। স্বজনরা আবেগের বশবর্তী হয়ে অভিযোগ করছেন।’
ওই ঘটনা প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার মাসুদ আরও বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে হাসপাতালের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আশীষ কুমার সাহা বুধবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন রোগীর কেবল শারীরিক অসুস্থতাই নয়, তার সামাজিক-অর্থনৈতিক দিকগুলোও চিকিৎসকদের বুঝতে হবে। কিন্তু দুয়েকজন চিকিৎসকের আচরণের কারণে আমাদের লজ্জায় পড়তে হয়।’
এ বিষয়ে জানতে বুধবার সকালে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘এরইমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। আরও যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশন নেওয়া হবে।’

আরও পড়ুন-

হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ

‘ডা. কাদেরের পিস্তলের ৪০ রাউন্ড গুলি ও ম্যাগাজিনের হদিস নেই’

/জেবি/টিআর/