‘আমরা বাচ্চা নেবো, কিন্তু লাশের ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না’

বাড়ির আঙিনায় শুয়ে কাঁদছেন আবু আলীর মাচাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবনগর এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ঈগল হান্টে নিহত জঙ্গি আবু আলীর খালাতো বোন ইনজিমা বলেছেন, ‘আমরা উদ্ধার হওয়া ভাতিজি সাজিদাকে নেবো, কিন্তু লাশের ব্যাপারে এখনও আমরা কিছু বলতে পারছি না।’
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সকালে শিবনগরের ত্রিমোহনীতে জঙ্গি আবুর বাসায় গিয়ে দেখা যায় তার অসুস্থ মা ঘরের আঙিনায় শুয়ে কাঁদছে। জঙ্গি আবুর বাবা ও ভাই বাড়িতে নেই। তারা ধান কাটতে সকালেই বেরিয়ে পড়েছে।
এ সময় কথা হয় জঙ্গি আবুর খালাতো বোন ইনজিমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাবির কারণে আমার ভাইয়ের (আবু) আজকে এই পরিণতি। বিয়ের আগে আমার ভাই ভালোই ছিল, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে খারাপ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুই ভাতিজিকে আমাদের কাছে রাখতে চাই। ওদেরকে আমাদের মতো মানুষ করতে চাই।’
এদিকে শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর এলাকার জঙ্গি আস্তানাটি এখনও ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ইতোমধ্যে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে। লাশ বহনের ব্যাগও আনা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে তারা ব্রিফিং করবে বলে জানা গেছে।
জঙ্গি আস্তানায় যে বাড়িটি আইনশঙ্খলা বাহিনী ঘিরে রেখেছে তার চারটি বাড়ির পরে বসবাসরত আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আবুর কারণে আমাদের এই পাড়াটি জঙ্গি পাড়া হিসেবে পরিচিতি পেল। আইনশঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় আশপাশের কাউকে বের হতে দেওয়া হয়নি। আমরা এ নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম।’
আরেক প্রতিবেশী পিয়ারা খাতুন বলেন, ‘বাড়িটি ঘিরে রাখার আগের দিন আবুকে আমরা দেখেছি সে আম গাছে পানি দিচ্ছিল। সে যে জঙ্গি কাজের সঙ্গে জড়িত আমরা তার কিছুই জানতাম না।’
আবুর আরেক প্রতিবেশী ইয়াদুল ইসলাম বলেন, ‘আবু একদিন আগে ঈদ পালন করতো। তাই আমরা তাকে সমাজ থেকে একঘরে করেছিলাম।’
এদিকে বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন ঈগল হান্টে চার জঙ্গি নিহত হয়।পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সোয়াট টিম পরিচালিত ওই অভিযানে আহত এক নারী ও এক শিশুকে উদ্ধারের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই আস্তানায় অভিযানে সন্ধ্যার দিকে চার জঙ্গি আত্মঘাতী হয়।’
ব্রিফিংয়ে ডিআইজি বলেন, ‘দেশের অন্য জঙ্গি আস্তানাগুলোর তুলনায় এই আস্তানার অভিযানটি একটু আলাদা। আমরা অভিযান চলাকালে একাধিকবার জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এই অভিযানে একজন নারী ও একটি শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটি সাফল্য।’
আত্মঘাতী জঙ্গি আবুর স্ত্রী সুমাইয়া তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানান ডিআইজি।

সিটিটিসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শিবনগরের ওই আস্তানায় আত্মঘাতী হওয়া চার জঙ্গির মধ্যে একজন আবু আলী। দুই মাস আগে সে-ই বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিল। নিহত বাকি তিন জঙ্গিও পুরুষ।
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার পরপরই একজন নারীকে নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স বের হতে দেখা যায় ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে। এর ১৫-২০ মিনিট পরই আস্তানা থেকে বের হয়ে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স। তাতে ছিল একটি শিশু। তবে দ্রুতগতিতে বের হওয়া ওই দুইটি অ্যাম্বুলেন্সে আরও কেউ ছিল কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর এলাকার একটি বাড়ি বুধবার (২৬ এপ্রিল) ঘিরে রাখে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা।বিকালে ঢাকা থেকে সোয়াট টিম পৌঁছানোর পর শুরু হয় অভিযান।
সিটিটিসি সূত্রে আরও জানা গেছে, বাড়ির মালিকের নাম ঝিন্টু হাজি। তিনি সেখানে থাকেন না। আবু আলী নামের একজন প্রায় দুই মাস আগে বাড়িটি ভাড়া নেয়। স্ত্রীকে নিয়ে সে ওই বাড়িতে ওঠে।
/এআর/টিএন/