বগুড়ায় এবার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা না হওয়ার আশঙ্কা

মেলার স্থানে মালিকরা ধান চাষ করছেনজায়গার অভাবে বগুড়ার গাবতলীতে এবার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর টোলবঞ্চিত মালিকরা এবার শতাধিক বিঘাতে ইরি-বোরো চাষ করেছেন। যার কারণে মেলা না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর এজন্য জনগণ মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলামকে দায়ী করেছেন।

সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গত ২০০ বছর ধরে উপজেলার গোলাবাড়ী বন্দর সংলগ্ন গাড়ীদহ নদীর পাশে একদিনের এ মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

গাবতলীর মহিষাবান মণ্ডলপাড়ার জাহিদুল ইসলাম রিপন জানান, তাদের পরিবারের শতাধিক বিঘা জমিতে ২০০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা চলে আসছে। আগে ২২ জন মালিক থাকলেও এখন অর্ধশত হয়েছে। ১৯৫৯ সালে মালিকরা মেলার টোল পেতে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে রায় পান। রায় অনুসারে বাদীরা (জমির মালিক) টোল আদায় করবে এবং সরকার জমিগুলো কাউকে লিজ দিতে পারবে না।

রিপন ছাড়াও জমির মালিক সাইফুল ইসলাম, আবদুস সামাদ, মোয়াজ্জেম হোসেন, হেদায়াতুল্লাহ, ফজলুল বারীসহ অনেকেই জানান, প্রতি বছর মাঘের শেষ বা ফাল্গুনের প্রথম বুধবার ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ মেলা’ হয়ে থাকে। মেলার জন্য তারা ওই শতাধিক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন না। কিন্তু আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও তারা টোল আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। গত বছর মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম তাদের এক টাকাও টোল আদায় বা জমির বিনিময়ে তাদের কোনও টাকা দেয়নি। এছাড়া মেলা করার জন্য তাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তাই এবার সব মালিক ওইসব জমি মেলার জন্য ফেলে না রেখে সেখানে ইরি-বোরো ধান রোপণ করতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ৯০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে সব জমিতে চাষ হবে। তখন মেলার আয়োজন করার মতো কোনও জমি থাকবে না। ফলে এ বছর ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে মেলা না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা এর জন্য মহিষাবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দায়ী করেছেন।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘জমিতে ধান চাষ করা হলেও রাস্তার দু’ধারে দোকান বসবে। স্বল্প পরিসরে হলেও ঐতিহ্যবাহী মেলাটি হবে।’

এদিকে এ খবরে হতাশ এলাকাবাসী বলছেন, একদিনের পোড়াদহ মেলায় নদী ও সমুদ্রের বড় বড় মাছ, মিষ্টান্ন, আসবাবপত্র, কুলবরই, তৈজসপত্র, কাপড়চোপড় ছাড়াও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাবেচা হয়। মেলায় সার্কাস, নাগরদোলা, পুতুলনাচ, কার-বাইক রেসিংসহ বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন থাকে। শত শত মানুষ এদিন মেলায় কেনাকাটা করেন। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়িতে মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি ও স্বজনদের দাওয়াত করা হয়। তাদের শীতের পিঠাপুলি ছাড়াও মেলার বড় বড় মাছ ও মিষ্টান্ন দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। ঈদে স্বজনদের দাওয়াত না করলেও পোড়াদহ মেলা উপলক্ষে দাওয়াত করতেই হবে। দীর্ঘদিন ধরে এটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এছাড়া এ মেলাকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের মোটা অঙ্কের ব্যবসা হয়ে থাকে। মেলা না হলে সবাই বঞ্চিত হবে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা স্বল্প পরিসরে হলেও পোড়াদহ মেলার আয়োজন করতে সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।