২০ বছর ধরে স্বেচ্ছাসেবী ট্রাফিক পুলিশ আজাহার আলী

আজাহার আলীপরনে ট্রাফিক পুলিশের পোশাক আর হাতে লাঠি নিয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন আজাহার আলী। নওগাঁর মান্দা উপজেলার রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের চারমাথায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন এই পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষটি। ২০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি কোনও সরকারি ট্রাফিক পুলিশ নন। নিজ চোখে একটি সড়ক দুর্ঘটনা দেখার পর থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। প্রথম দিকে তেমন কোনও অর্থ সহায়তা না পেলেও এখন স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনের কাছ থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন। তবে যেভাবেই হোক যতদিন সুস্থ থাকবেন এই দায়িত্ব পালন করে যেতে চান আজাহার।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার লক্ষ্মিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা আজাহার আলী আগে ঢাকায় রিকসা চালাতেন। বছর বিশেক আগে মহাদেবপুর উপজেলার বড় ব্রিজ এলাকায় একটি সড়ক দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি। ওই ঘটনার পর থেকে সড়কে মানুষের মৃত্যু ঠেকাতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ট্রাফিক পুলিশের কাজ করেন তিনি। আজাহার আলী বলেন, ‘২০ বছর আগের ওই দুর্ঘটনায় এক মা ও তার মেয়েকে নিজ চোখে মারা যেতে দেখি। ঘটনাটি আমার বিবেককে নাড়া দেয়। সেই থেকে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন শুরু করি। মহাদেবপুর উপজেলায় ৮ বছর ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করি। তারপর ১২ বছর ধরে মান্দার নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের চার মাথার মোড়ে দায়িত্ব পালন করছি।’
স্থানীয় ভ্যানচালক সুরুজ মিয়া বলেন, প্রথম দিকে আজাহার আলীর নির্দেশ কেউ মানতে চাইতো না। তবে এখন সবাই মানে। তিনি প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফেরিঘাটে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ট্রাক ড্রাইভার বাদল হোসেন বলেন, ব্রিজের এই স্থানটি খুবই বিপদজনক। কিন্তু আজাহার আলী যেভাবে দায়িত্ব পালন করেন, তাতে বোঝা যায় না আসলে তিনি বেসরকারি ট্রাফিক পুলিশ।
আজাহার আলী বলেন, ‘আগে ঢাকায় রিকসা চালাতাম। তাতে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ভালই যেতো। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন শুরুর পর থেকে ওই আয় বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম দিকে কোনও অর্থ সহায়তাই পেতাম না। তারপরও দায়িত্ব পালন বাদ দেইনি।’ তিনি বলেন, ‘এখন স্যাররা (বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, ইউএনও অফিস, থানা ও সার্কেল) কিছু আর্থিক সহযোগিতা করে থাকেন।’
নওগাঁ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মান্দা সার্কেল) হাফিজুল ইসলাম বলেন, আজাহার আলী যেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তা প্রশংসার দাবিদার। আমরা সাধ্য মতো তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করে থাকি।