বিএনপি নেতা শাহীন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দু’জনের স্বীকারোক্তি

নিহত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন, ডানে হত্যাকারী রাসেল ও পায়েল

বগুড়ার সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পরিবহণ ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন হত্যা রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দু’জনকে গ্রেফতারসহ হত্যার কাজে ব্যবহৃত একটি পালসার মোটরসাইকেলও জব্দ করেছে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার কারণ, জড়িতদের নাম ও বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। বিকালে তাদের দু’জনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমাণ্ড চাওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা। বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।

গ্রেফতার দু’জন হলো বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মন্ডলপাড়ার আবু তাহেরের ছেলে সন্দিগ্ধ আসামি রাসেল (২৮) ও নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার মৃত কালু শেখের ছেলে এজাহারনামীয় আসামি পায়েল শেখ (৩৮)।

তিনি আরও জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃত্ব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে চলে আসা দ্বন্দ্বের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় মোটর মালিক গ্রুপের এক নেতার অফিসে (অফিসের স্থান উল্লেখ করা হয়নি) গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ওই নেতার সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক এক সহযোগী, চারমাথার একজন ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিল। অফিস রুমের বাইরেও কয়েকজন অপেক্ষায় ছিল। বৈঠকে মোটর মালিক গ্রুপের বিবাদী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী মাহবুব আলম শাহীনকে নিষ্ক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পরিকল্পনা অনুসারে ওই নেতার ঘনিষ্ট সহযোগী এবং আরও একজন তাদের নিজস্ব লোকজনকে খবর দেয় এবং চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থল নিশিন্দারা উপশহর বাজারের দিকে চলে যায়। সেখানে তারা উপযুক্ত সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আগে থেকে ওই স্থানে থাকা এক ব্যক্তি চারমাথার ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীকে মোবাইল ফোনে খবর দিলে পায়েল শেখ, রাসেল ও আরও ৮/৯ জন ঘটনাস্থলের কাছে আসে। অ্যাডভোকেট শাহীন সেখানে নুনগোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলীমুদ্দিন ও মোটর মালিক গ্রুপের হিসাব রক্ষক বাপ্পীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য একটু দূরে সরে গেলে সুযোগ বুঝে আসামিরা তাকে (শাহীন) উপর্যুপরি কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতের পর ১০ তলা ভবনের পাশ দিয়ে দৌড়ে নিশিন্দারার দিকে চলে যায়। পথচারিরা শাহীনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হত্যার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাত সদস্যের তদন্ত সহায়ক টিম গঠন করা হয়।

১৬ এপ্রিল বিকালে নিহতের স্ত্রী আকতারা জাহান শিল্পী সদর থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলো, বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সদরের বড় কুমিড়া এলাকার মৃত রঞ্জু মিয়ার ছেলে সোহাগ, পার্শ্ববর্তী ছোট কুমিড়া সরদারপাড়ার বিদ্যুৎ, ছোট কুমিড়া পশ্চিমপাড়ার আনোয়ার হোসেনের ছেলে মাহমুদ, একই এলাকার মৃত বাদশার ছেলে আজিজুল ইসলাম কাইল্লা ও নিশিন্দারা এলাকার মৃত কালু শেখের ছেলে পায়েল শেখ।

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৭ এপ্রিল বুধবার ভোরে রাসেলকে নিশিন্দারার বাড়ি থেকে গ্রেফতার ও হত্যায় ব্যবহৃত একটি পালসার মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়নের আমলিচুকাই গ্রামে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে পায়েল শেখকে গ্রেফতার করা হয়। পায়েলের বিরুদ্ধে সদর থানায় বিভিন্ন ধারায় ৯টি মামলা রয়েছে। পুলিশ সুপার আরও জানান,প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জন হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে। আরও তথ্য পেতে বৃহস্পতিবার বিকালে তাদের দু’জনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হবে। এছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।