নওগাঁয় ৭২ কোটি টাকার ফসল ও মাছের ক্ষতি

নওগাঁয় বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ফসলটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে এবার নওগাঁর ছয়টি উপজেলা প্লাবিত হয়। এতে করে পুকুরের মাছ ভেসে এবং ফসল তলিয়ে গিয়ে প্রায় ৭২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নওগাঁর ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১৫ জুলাই মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর উভয় তীরের নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়া, জোকাহাট, পাজরভাঙা, চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৬ জুলাই সকালে আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ-বান্দাইখাড়া সড়কের আহসানগঞ্জ সুইচ গেটের দক্ষিণে জাতআমরুল জিয়ানী পাড়ার সামনের সড়ক ভেঙে যায়। এতে জেলার নওগাঁ সদর, রানীনগর, আত্রাই, মান্দা, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। এতে মাছের ঘের ভেসে যায় ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

রানীনগর উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, চার বিঘা জমির আউশ ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আমন ধানের জন্য তৈরি করা ১০ কাঠা জমির বীজতলাও পানির নিচে। কৃষি অফিসের পরামর্শে নতুন করে আবার উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করতে হচ্ছে। এতে করে আমন চাষে খরচ অনেক বেশি পড়বে। প্রতি বছরই আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হই। যদি নদী খননসহ বাঁধগুলো শক্তভাবে মেরামত করা না হলে আমরা বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবো না।

মান্দা উপজেলার চকবালু গ্রামের মৎস্য চাষী আশরাফুল ইসলাম জানান, তিন বছরের জন্য তিনটি পুকুর ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ইজারা নিয়েছেন। সেখানে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ দেশীয় মাছ চাষ করেছেন। ১৫ জুলাই আত্রাই নদীর মান্দা-আত্রাই সড়কের চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামক স্থান ভেঙে প্রায় ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে তার তিনটি পুকুর প্লাবিত হয়। এরমধ্যে একটি পুকুর থেকে পাঁচ মণেরর মতো মাছ ধরতে পেরেছেন। বাকি মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। বন্যায় তার প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, জেলায় ৪ হাজার ১৪৪ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি পানির নিচে ছিল। পানি নেমে যাওয়ায় ৩ হাজার ৯৭৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়। যেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ কোটি টাকা। বৃষ্টি অব্যহত থাকলে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফসলের আরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা আছে।

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, জেলায় ৩৭২টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৩০০ হেক্টর। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। পানির বৃদ্ধি পেলে নতুন করে আরও প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।