বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘বউ মেলা’ কাল, পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ

বগুড়ার গাবতলীর গোলাবাড়ি এলাকায় ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। অপরদিকে গত ২২ বছরের মত এবারও পোড়াদহ মেলা শেষে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মহিষাবান গ্রামে বউ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় তরুণী, গৃহবধূসহ সব বয়সের মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করে থাকেন।

এবার পোড়াদহ মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল যমুনা নদীর ৬০ কেজি ওজনের বাঘা আইড় মাছ। বগুড়ার গাবতলীর পশ্চিম মহিষাবান গ্রামের শুকুর আলী মাছটি দেড় হাজার টাকা কেজি দরে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এছাড়া মেলায় হরেক রকম মিষ্টির মধ্যে স্থান পেয়েছে ১০ কেজি ওজনের মিষ্টি মাছ। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে, ৩০০ টাকায়।

আজ অনুষ্ঠিত হয়েছে পোড়াদহ মেলা। ছিল বড় মাছে পসরা।

স্থানীয়রা জানান, সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে প্রতি বছর পৌষের শেষ বুধবার পোড়াদহ মেলা বসে। দুশ’ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রতি বছরের মত গাবতলী উপজেলার গোলাবাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ফাঁকা মাঠে মেলা বসেছিল। বিভিন্ন প্রজাতির বিশাল আকৃতির মাছ ও মাছ আকৃতির মিষ্টির পসরা বসে। ৪৫ কেজি ওজনের বাঘা আইড় মাছ বিক্রির জন্য আনেন গাবতলীর রানীর পাড়ার মোস্তাফিজার রহমান। তিনিও দেড় হাজার টাকা কেজি দাম হাঁকেন। পরে কিছুটা কমে যমুনা নদীর মাছটি বিক্রি করেছেন। বড় বড় মাছ কিনতে ও দেখতে শত শত
মানুষের পদচারণা ঘটে মেলায়।

মেলায় চিত্ত বিনোদনের জন্য সার্কাস, মোটরসাইকেল ও কার খেলা, নৌকা খেলা ও নাগরদোলা। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রতিটি বাড়ি আত্মীয়-স্বজনে ঠাঁসা। মেয়েরা স্বামী, সন্তান ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। কোনও উৎসবে জামাই-মেয়েসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত না দিলেও তেমন কোন সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে, যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। মেলাটি একদিনের জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলার আমেজ থাকে সপ্তাহ ব্যাপী।
দীর্ঘদিন ধরে মহিষাবান গ্রামের মণ্ডল পরিবার মেলা পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেওয়া হয়। যে কারণে মহিষাবান ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম মেলাটির নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি জানান, প্রশাসনসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে।

গাবতলী থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) লালমিয়া জানান, এবার মেলায় কোনও জুয়া, অশ্লীল নৃত্যানুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান জানান, সকলের সার্বিক সহযোগিতায় মেলাটি অত্যন্ত
শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।