আম পরিবহনের জন্য ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এই ট্রেন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ সময় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন যুক্ত ছিলেন ভিডিও কনফারেন্সে।
পশ্চিম রেলওয়ের প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মোমিন জানান, এবার প্রথম দিনে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে চাঁপাই-রাজশাহীর ৫ হাজার ৯৭৪ কেজি আম ঢাকায় গেছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৯২৫ কেজি, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ২ হাজার ৪১৯ কেজি ও বাঘার আড়ানী স্টেশন থেকে ২ হাজার ৬৩০ কেজি আম নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনটি ছেড়ে রাজশাহীতে আসে। রাজশাহী থেকে ৬টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী থেকে আড়ানী স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্মে পৌঁছে। ২০ মিনিট থামার পর রওনা হয় ট্রেনটি। এ স্টেশন থেকে শফিকুল ইসলাম, জব্বার হোসেন, আবু হানিফসহ ১০ জন ব্যবসায়ী ২ হাজার ৬৩০ কেজি আম বুক করেন। এই ট্রেনটি সপ্তাহের সাত দিন মাল বহন করবে। ট্রেনটির পাঁচটি ওয়াগনে আম, শাক-সবজিসহ যেকোনও ধরনের পার্সেল মালামাল বহন করা যাবে।
এ বিষয়ে আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ৩৮০ কেজি আম ১ দশমিক ৭৪ পয়সা হিসেবে বুক করেছি। ২৫ কেজি ওজনের ১২টি ক্যারেট ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্যারেট প্রতি ১০ টাকা লেবার খরচ দিয়েছি। ঢাকা স্টেশনে নামাতে লাগবে আরও ১০ টাকা। তবে সড়কের চেয়ে এখানে পরিবহন খরচ অনেক কম। তাই ট্রেনে আম পাঠালাম।’
আড়ানী স্টেশন মাস্টার সদরুল হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিনে ১০ ব্যবসায়ীর ২ হাজার ৬৩০ কেজি আম বুক করা হয়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে। তবে সড়কের চেয়ে পরিবহন খরচ অনেক কম হবে।’
জানা গেছে, কুরিয়ারের তুলনায় ট্রেনে অল্প খরচে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। ট্রেনটিতে চাঁপাই থেকে প্রতি কেজি এক টাকা ৩০ পয়সা এবং রাজশাহী থেকে এক টাকা ১৭ পয়সা দরে আম নেওয়া হচ্ছে। যেখানে কুরিয়ার সার্ভিসে রাজশাহী থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে ঢাকায় আম পাঠাতে খরচ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আম ট্রেনে পাঠালে একদিকে বাঁচবে টাকা, অপরদিকে আম নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কম হবে। এতে আম বিক্রি করতে সমস্যা হবে না।
উল্লেখ্য, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) মো. নাসির উদ্দিন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে আমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য পার্সেল পরিবহনের জন্য এবারও বিশেষ এ ট্রেনটি চালু করা হচ্ছে। ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যখন ঢাকা যাবে তখন সেটির নাম হবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-২’। আর ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফেরার পথে নাম হবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-১’। ট্রেনটি সপ্তাহে প্রতিদিনই চলাচল করবে।
ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকাল ৪টায় ছেড়ে আসবে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে ৫টা ২০ মিনিটে। পণ্য তোলার জন্য ট্রেনটি এখানে ৩০ মিনিট বিরতি দেবে। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি আবারও ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটিতে মোট পাঁচটি ওয়াগন (মালগাড়ি) থাকবে। এতে আমের পাশাপাশি সব প্রকার শাক-সবজি, ফলমূল, ডিমসহ কৃষিজাত পণ্য, আসবাবপত্র এবং রেলওয়ের আইনে পার্সেল হিসেবে বহনযোগ্য সব প্রকার মালামাল বহন করা হবে। ট্রেনটিতে কাঁচা বা আধাপাকা আম যেন গরম ও অতিরিক্ত চাপে নষ্ট না হয়ে যায় সে কারণে ধারণক্ষমতার কিছু কম পণ্য বহন করা হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে ট্রেনটি আমনুরা বাইপাস, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ, আড়ানি ও আব্দুলপুর বাইপাস স্টেশনে থামবে। এসব স্থানে আমসহ পার্সেল পণ্য ট্রেনে তোলা হবে। এরপর যমুনার ওপারে থাকা টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গী, ঢাকা বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও এবং কমলাপুর স্টেশনে থামবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। ফেরার পথে ট্রেনটি রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও, টঙ্গী, টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জ, চাটমোহর এবং রাজশাহী স্টেশনে থামবে। তবে যাত্রাপথে কোথাও সাধারণ যাত্রী এ ট্রেনে তোলা হবে না।
ট্রেনটিতে ক্যারেট প্রতি লেবার খরচ ধরা হয়েছে ১০ টাকা। এটি নির্ধারিত। কোনও শ্রমিক বেশি নিলে বা কেউ অভিযোগ করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবার রেলওয়ের প্রত্যেকটি লেবারকে নির্ধারিত লাল রঙের পোশাকও দেওয়া হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ট্রেন ছাড়ার আগে যে-কেউ তাদের মালামাল বুকিং দিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালে চাষিদের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী থেকে এবারও ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করা হচ্ছে।
এর আগে গত বছর ৫ জুন প্রথমবারের মতো এ রুটে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। গত বছরের জুন ও জুলাইয়ে মোট ৮৫৭ মেট্রিক টন আম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে পাঠানো হয়েছিল। এতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আয় হয় নয় লাখ ২৯ হাজার ৮৬৯ টাকা। তবে এবার ঢাকা ছাড়াও খুলনা ও চট্টগ্রামের দিকে চাহিদা অনুযায়ী আম পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে ডেডিকেটেড ট্রেনে এসব পণ্য পাঠানো হবে। পরে এ বিষয়গুলো আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের কর্মকর্তা নাসির।