বগুড়ায় কালবৈশাখীর ৪ মিনিটের তাণ্ডব, দুজনের মৃত্যু

বগুড়ায় শনিবার (২১ মে) ভোরে ঘণ্টায় ৮৮.৬ কিলোমিটার বেগে চার মিনিট স্থায়ী কালবৈশাখী ঝড় হয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন স্থানে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও গাছপালা। গাছের ঢাল ও ঘরের প্রাচীরের চাপায় দুজন মারা গেছেন।

ঝড় ও বৃষ্টিতে অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়েছে। অসংখ্য পাকা ও আধাপাকা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছের ঢাল ভেঙে বৈদ্যুতিক তারের ওপর পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে বাসাবাড়িতে পানি না থাকায় রান্না ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। ঝড়ের তাণ্ডবে শহরের বিভিন্ন পার্কে পাঁচ শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মৃত্যু হয়েছে।

ঝড়ের তাণ্ডবে ঘর ও গাছের চাপায় মারা যাওয়া দুজন হলেন- দিনমজুর শাহীন আলম (৪৫) ও মালি আবদুল হালিম (৫০)। কাহালু উপজেলার কালাই ইউনিয়নের মাঝপাড়া গ্রামে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে ওই গ্রামের গোলজার হোসেনের ছেলে শাহীন আলম অবস্থান করছিলেন। পাশের একটি পাকুর গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে চাপা পড়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। শাজাহানপুর উপজেলার বৃকুষ্টিয়া গ্রামে আনসার আলীর ছেলে আবদুল হালিম শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত গাছের ডাল কাটছিলেন। এ সময় তিনি গাছের চাপায় গুরুতর আহত হন। দুপুরে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে তিনি মারা যান।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহ আল জানান, শনিবার ভোরে পশ্চিম দিক থেকে হঠাৎ ঝড় শুরু হয়। চার মিনিট স্থায়ী ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৮.৬ কিলোমিটার। এটা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ঝড়।

তিনি জানান, এর আগে গত ১৯ মে ঝড়ের সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৭.৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া ঝড়ের পাশাপাশি শুক্রবার রাত ৩টা ৪০ মিনিট থেকে শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় ৩৬.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

bogra1

ঝড়ে শহরের বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ খোকন পার্ক, এডওয়ার্ড পাকে কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় টিনের ঘরবাড়ির চালা উড়ে যায়। জমিতে থাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক ইউসুব রানা মন্ডল জানান, বোরো ধান কাটামাড়াই চলাকালে এ ঝড়ে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর আমসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল ঝরে পড়েছে।

নর্দার্ন পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) নির্বাহী প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়া ছাড়াও গাছের ভাঙা ঢাল তারে পড়েছে। এতে শনিবার ভোর ৪টা থেকে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক ফিডারে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয়নি।

অপরদিকে, এই ঝড়ে শহরের পৌর পার্কসহ বিভিন্ন স্থানে নানা প্রজাতির অন্তত ৫০০ পাখির মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া পাখির মধ্যে দাঁড়কাক, পাতি কাজ, গো শালিক, ভুবন চিল, শালিক, টিয়া ও বক রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন টিম ফর এনার্জি অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্ট রিসার্চ (তীর) বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক রিফাত হাসান বলেন, পৌর পার্ক ছাড়াও বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে পাঁচ শতাধিক পাখি ঝড়ের কবলে পড়ে মারা গেছে।