প্রত্যাহারের পর এবার বরখাস্ত করা হলো সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে

বগুড়া শহরের নাটাইপাড়ার একটি বাড়িতে ঢুকে মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠা সদর থানার এসআই মাসুদ রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে বাড়িতে ঢুকে মারধর, চুরি ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশের সোর্স ইকবাল হোসেনের নাম উল্লেখ অজ্ঞাত আরও দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করা করেছেন ওই বাড়ির বাসিন্দা জয় কুমার সিং।

শনিবার (৬ আগস্ট) তিনি সদর থানায় মামলাটি করেন। তবে অজ্ঞাত কারণে এজাহারে চাঁদা দাবির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। যদিও শুক্রবার বিকালে ঘটনার পরপরই ওই এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছিল। আজ তাকে বহিষ্কার করা হলো।

জানা গেছে, বগুড়া সদর থানার এসআই মাসুদ রানা তার সোর্স ইকবাল হোসেনকে নিয়ে শুক্রবার বিকালে শহরের নাটাইপাড়া নাপিতপাড়ায় তরুণ কুমার শীলের বাড়িতে যান। তারা পুলিশ পরিচয়ে বাড়িতে ঢুকে প্রথমে তরুণ কুমারের মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। এ সময় ওই বাড়িতে কয়েকজন মোবাইল ফোনে অনলাইন জুয়া খেলছিলেন বলে দাবি করা হয়। সোর্স বর্তমানে বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় ভাড়া বাড়িতে বসবাসকারী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পোরজান এলাকার আফসার আলীর ছেলে ইকবাল হোসেন ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।

বাড়ির লোকজন চাঁদা দাবির বিষয়টি মোবাইল ফোনে ভিডিও করতে শুরু করেন। তখন এসআই মাসুদ রানা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারধর করেন। নারীদেরও মারধর করার অভিযোগ ওঠে। এতে প্রতিবেশীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা ও তার সোর্সকে অবরুদ্ধ করেন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে জনগণ শান্ত হন। তখন এসআই মাসুদ রানা ও সোর্স ইকবাল হোসেনকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়। আহত তরুণ কুমারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে, চাঁদাবাজির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার পুলিশ সুপারের নির্দেশে এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত এবং তার সোর্স ইকবাল হোসেনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া পুলিশ সুপার এ ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলামকে দায়িত্ব দেন।

সদর থানার ওসি সেলিম রেজা বলেন, ‘তরুণ কুমার শীলের ছোট ভাই জং কুমার সিং শনিবার থানায় সোর্স ইকবাল হোসেনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুজনের বিরুদ্ধে মারধর, যৌন হয়রানি ও চুরির মামলা করেন। তাকে গ্রেফতার দেখানোর পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সুপার
অভিযুক্ত এসআই সেলিম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসআই মাসুদ রানা ৭-৮ মাস আগে বগুড়া সদর থানায় যোগ দেন। এরপর থেকে তিনি বেপরোয়া চলাফেরা শুরু করেন। তিনি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অমান্য করে নিজের ইচ্ছায় কাজকর্ম করতেন। তার এসব আচরণের কারণে সহকর্মীরা তাকে বারবার সতর্ক করেন। থানার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে তাই প্রায় দুমাস আগে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীতে জানানো হয়েছিল।’