বজ্রাঘাতে ৯ জনের মৃত্যু: শোকে স্তব্ধ মাটিকোড়া

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায় বজ্রাঘাতে ৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বাবা-ছেলে ভাই ও মেয়ের জামাইসহ এক পরিবারেরই পাঁচ জন। বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। একসঙ্গে ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মৃতরা হলেন—মাটিকোড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম (৪০), বাহাদুর আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৬০), আলিম মিয়ার মেয়ে রত্না খাতুন রিতু (১২) ও মোস্তফার মেয়ে মারিয়া (৭)। 

এক পরিবারের মারা যাওয়া পাঁচ সদস্যের বাড়ি উপজেলার শিবপুর গ্রামে। তারা হলেন—আফছার আলী (৬০), তার ভাই শমসের আলী (৬৫), শমসের আলীর ছেলে শাহিন মিয়া (২৭), শমসেরের জামাতা মোকা মিয়া (৫০) ও তার ছেলে মোন্নাফ আলী (২৫)।

মৃতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

এছাড়া একই ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে নূরনবীর মেয়ে নূর জাহান (৯), তার বোন নূর নাহার নদী (১২), সাইফুল প্রামানিকের মেয়ে রুপা (১২) ও রফিকুল ইসলামের মেয়ে আমিনা (১৩)। এর মধ্যে নূর নাহার নদী গুরুতর অবস্থায় খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

আরও পড়ুন: বজ্রাঘাতে মৃতদের লাশ দেখে বৃদ্ধার মৃত্যু

মৃত রিতুর বাবা আব্দুল আলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘গতকাল বিকালে আমার মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে পাশের একটি ডোবায় গোসলে যায়। এ সময় পাশে শ্যালো ইঞ্জিন চালিয়ে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে দেখে সেখানে গোসল করতে যায়। বৃষ্টি শুরু হলে ওই শ্যালো ঘরের টিনের ছাপড়ার নিচে দাঁড়ায়। ঠিক এই অবস্থায় বজ্রাঘাত হয়। আমরা খবর পাওয়ার পরে সেখানে গিয়ে দেখি, রিতু কাদা-পানিতে পড়ে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

মৃত শাহ আলমের বাবা নুরুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘আমার ছেলে শিবপুর গ্রামে বোরো ধানের চারা বিক্রি করে। ওই গ্রামের কয়েকজন কৃষক চারা তুলতে আসেন। এ সময় শাহ আলমও তাদের সঙ্গে যায়। এরপরেই বৃষ্টি শুরু হয়। পরে আমরা জানতে পারি, শাহ আলম বজ্রাঘাতে মারা গেছে। তার সঙ্গে একই গ্রামের আরও তিন জন ও চারা তুলতে আসা শিবপুর গ্রামের পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।’

একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী

মাটিকোড়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বজ্রাঘাত দেখে সেখানে থাকা এক শিশু দৌড়ে এসে খবর দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আমিই প্রথমে দৌড়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি, একেকজন একেক জায়গায় পড়ে আছে। এরপরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। পরে তারা এসে সবাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।’

পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, ‘একই পরিবারের পাঁচ জনসহ ৯ জনের মৃত্যুর ঘটনা এলাকাবাসী কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। সবার মাঝে একটা শোক কাজ করছে। মৃতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাটাও যেন কারো জানা নেই।’

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে।’

আরও পড়ুন—

বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ৯ কৃষকের

বজ্রাঘাতে ৯ মৃত্যু, পাঁচ জনই এক পরিবারের