নির্বাচনে দ্বিতীয় স্ত্রীকে সমর্থন দিয়ে প্রথমজনকে তালাক নোটিশ পাঠালেন চেয়ারম্যান

রাজশাহীতে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য পদে দ্বিতীয় স্ত্রীকে সমর্থন দিয়ে প্রথম জনকে তালাক নোটিশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল হকের দুই স্ত্রী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, মনোনয়নপত্র উত্তোলনকারী দুই স্ত্রীর মধ্যে ছোট স্ত্রী ফিরোজা খাতুনকে সমর্থন দিয়েছেন স্বামী চেয়ারম্যান রেজাউল হক। আর বড় স্ত্রী নাছিমা বেগমকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি। 

স্বামী রেজাউল হক নিজেও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার আরেক পরিচয় বাগমারা আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ছোট ভাই। তিনি উপজেলা কৃষকলীগের সাবেক সহসভাপতি। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে বাগমারার প্রভাবশালী পরিবারটিকে নিয়ে তাই এখন আলোচনার শেষ নেই।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বড় স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, এবার জেলা পরিষদের নারী সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নিতে আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলাম। গত ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন জমা দেই। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ পারিবারিক সর্মথন পক্ষে থাকায় ভোট যুদ্ধে অংশ নিচ্ছি। ৩২ বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে সংসার করেছি। এ বয়সে হঠাৎ তালাক নোটিশ পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো না।

স্বামী রেজাউল হক বলেন, ছোট স্ত্রী ফিরোজা খাতুন আমার সঙ্গে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আমার অনেক আগে থেকে ইচ্ছা ছিল সে যেন রাজনীতিতে যোগ দেয়।  

তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠানোর বিষয়ে বলেন, নিষেধ করার পরেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় গত বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বড় স্ত্রী নাছিমা বেগমকে তালাক নোটিশ পাঠিয়েছি। এরপরও যদি সে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করে, তাহলে ৩২ বছরের সংসার ভাঙতে বাধ্য হবো।

তিনি বলেন, ‘তালাকের কাগজ বৃহস্পতিবার পাঠিয়েছি। রবিবার-সোমবার পেয়ে যাবে।’

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রেজাউল হক নিজ ইউপি কার্যালয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে প্রথম স্ত্রী নাছিমা বেগমকে তালাক দেওয়ার বিষয়টি জানান। এ সময় দ্বিতীয় স্ত্রী ফিরোজা খাতুনের পক্ষে কাজ করার জন্য সবাইকে অনুরোধ জানান তিনি। 

জানা যায়, প্রথম স্ত্রী নাছিমা মাড়িয়া ইউনিয়নের শিকদারী এলাকায় চেয়ারম্যান রেজাউল হকের  বাড়িতেই থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বাগমারা উপজেলা পরিষদের ভবানীগঞ্জের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।  

তালাকের নোটিশ হাতে পাননি জানিয়ে নাছিমা বেগম বলেন, তালাকের বিষয়টি শুনেছি। তবে হাতে কোনও কাগজ পাইনি। স্বামীর সঙ্গে নিজ বাড়িতেই আছি। জয়-পরাজয় ও ভোটের ব্যবধানই প্রমাণ করবে কোন স্ত্রী কেমন জনপ্রিয়।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে রেজাউল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বলেন, স্বামীই আমাকে প্রার্থী করেছেন। বলেছেন, তুমি শিক্ষিত মানুষ, প্রার্থী হও। আমি বলেছিলাম, প্রথম স্ত্রী যেহেতু প্রার্থী হয়েছেন, তার পক্ষেই থাকি। কিন্তু স্বামী মানেননি। তার ইচ্ছাতেই রাজনীতিতে নেমেছি।

রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনের সহকারী রির্টানিং অফিসার আবুল হোসেন বলেন, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৯ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এবার ভোটার সংখ্যা এক হাজার ১৮৫ জন।

তিনি আরও জানান, জেলার বাগমারা, মোহনপুর ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাত জন। ভোটার সংখ্যা ৪৩৭ ভোট। এর মধ্যে বাগমারা উপজেলায় ২৩৭, মোহনপুর উপজেলায় ৯৪ ও দুর্গাপুর উপজেলায় ১০৬ ভোট।

আবুল হোসেন জানান, ১৮ সেপ্টেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর। ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে।