একটি সৌদি রিয়াল দেখিয়ে হাতিয়ে নিলো দেড় লাখ টাকা

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামের দেলবার হোসেনের ছেলে ইমন আলী (২৭) ও বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া কাটাসকুল গ্রামের লোকমান হেকিমের ছেলে ফিরোজ কবির অভিনব এক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। বেশি লাভের আশায় সৌদি মুদ্রার ৫০ রিয়ালের ১১০০ টি কিনতে গিয়ে এই প্রতারণার শিকার হন তারা। এসব রিয়াল কিনতে গিয়ে ৫-৬ টি ৫০ রিয়ালের নোটের সঙ্গে পেয়েছেন একটি ভীম। আর খোয়ালেন এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

ভুক্তভোগী ফিরোজ কবির জানান, তিনি আর ইমন একই কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রায় ১৫ দিন আগে বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাজারে হোটেলে খাওয়ার সময় ওই দোকানে পরিচয় হয় ৪৫-৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ মোড় এলাকায় বলে জানিয়ে ৫০ রিয়ালের একটি নোট ভাংতি করতে দেন। এক সপ্তাহ পরে নোটটি একটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ১২৫০ টাকায় ভাঙান।

তিনি জানান, খরচ বাদ দিয়ে ওই ব্যক্তি নেন ৫০০ টাকা। ওই ব্যক্তি তাকে জানান, তার বাড়ির পাশের এক বৌদির ৫০ রিয়ালের ১১০০টি (৫৫ হাজার রিয়াল, টাকায় প্রায় ১৫ লাখ) নোট রয়েছে। ওই নোটগুলো তিনি বিক্রি করতে চান। তাকে অর্ধেক লাভ দিলে ওই নোটগুলো ৩০০ টাকা পিস হিসেবে কিনে দেওয়ার কথা বলেন। যোগাযোগের পর ওই ১১০০টি নোটের দাম নির্ধারণ হয় তিন লাখ টাকা। এর মধ্যে দেড় লাখ টাকা নগদ আর দেড় লাখ টাকা পরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নিজের কাছে টাকা না থাকায় তিনি ইমনকে বললে ইমন নিজে ওই দেড় লাখ টাকা দিতে চান। বিক্রির পর উভয়ে সমান লাভ নেবেন- এমনই কথা হয়। পরে ইমন এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেন।

ফিরোজ জানান, বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) যোগাযোগ করলে কথিত রিয়াল বিক্রেতা জানান, তারা রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। সন্ধ্যার পর বানেশ্বর বাজারে গেলে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে রিয়াল রাখা বাক্স নেন। কিন্তু কিছু দূর আসার পর ওই বাক্স খুললে ওপরে ৫০ রিয়ালের ৫-৬টি নোট আর ভেতরে কাগজে মোড়ানো একটি ভীম পান। সঙ্গে সঙ্গে ওই বাড়িতে গেলেও তাদের আর পাননি। এমনকি তাদের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

ফিরোজ আরও জানান, বানেশ্বর থেকে ফেরার পর তাকে ইমনের বাড়িতে নিয়ে আটক রাখা হয়। দীর্ঘ আলোচনা শেষে শুক্রবার (৪ নভেম্বর) রাতে এক লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি।

ইমন আলী বলেন, ফিরোজ কবিরের সঙ্গে একই কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে সম্পর্ক। তাই তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। টাকার লোভে পড়ে এমন ফাঁদে পা দিয়ে ভুল করেছি। সমঝোতার মাধ্যমে এক লাখ টাকায় ফিরোজ কবিরকে ছেড়ে দিয়েছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থানা পর্যন্ত গড়ালে নিজেরাও ঝামেলায় পড়তে পারি। তাই নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করেছি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আইউব আলী জানান, তিনি ওই বিষয়ে কিছুই জানেন না।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হক জানান, বিষয়টি শোনার পর জিজ্ঞেস করলে ইমন ও স্থানীয়রা এড়িয়ে গেছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইমনের প্রতিবেশী বারেক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।

গুরুদাসপুর থানার ওসি আব্দুল মতিন জানান, এ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ তারা পাননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।