৬ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া ছয় উপনির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া এই ভোট বিকাল সাড়ে ৪টায় শেষ হয়। সবকটি আসনেই ইভিএমে ভোট হয়েছে। ভোট শেষে এখন গণনা চলছে।

এদিকে, এই উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি একদম কম ছিল। তবে কোনও কেন্দ্রে তেমন সংঘর্ষ বা ঝামেলাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। উপনির্বাচন হওয়া ছয়টি আসন হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ ও ৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ৩ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২।

বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে ভোটের সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে...

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়-২ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী না থাকায় এখানে ভোটের তেমন একটা আমেজই ছিল না। দুপুর পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে ভোটারের তেমন উপস্থিতিই দেখা যায়নি। বিকালের দিকে কিছু ভোটার এলেও সারাদিনই অলস সময় পার করতে হয়েছে এখানকার কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মকর্তারা।

এই আসনে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে সমর্থন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি, জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকলেও ভোটের মাঠ ছিল একদমই নিরুত্তাপ।

এই আসনের সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, ‘সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ২৩৮ জন। এর মধ্যে বেলা ১২টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৬০টি। সেই হিসেবে ভোট গ্রহণের হার মাত্র দেড় শতাংশ। বৈরী আবহাওয়া কারণে মানুষের মাঝে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।’

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের একটি ভোটকেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই কেন্দ্র থেকে একটি ককটেল উদ্ধার করেছে র‍্যাব। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নবাবগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে এটি উদ্ধার করা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের র‌্যাব-৫ ক্যাম্পের কমান্ডার রুহ-ফি-তাহমিন তৌকির জানান, ভোটকেন্দ্রের ভেতরের এক কোণা থেকে একটি পরিত্যক্ত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের অভিজ্ঞ বোমা ডিসপোজাল টিম সেটি উদ্ধার করে এবং পরে এটি নিষ্ক্রিয় করা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিব খান বলেন, জেলা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত পিয়নকে বের করা নিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল ওদুদের সমর্থক আব্দুল হাকিমের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সামিউল হক (আপেল) এর মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় দুজন আহত হন।

এই জেলার আরেক আসন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসনে সকাল থেকেই ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। কেন্দ্রগুলো ঘুরে ইভিএম মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটির অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ১৮০টি ভোটকেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। প্রার্থীদের দুয়েকটি অভিযোগ ছিল। এটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তাৎক্ষণিক কেন্দ্র পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হলেও কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। তবে কোনও কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বেলা ১০টায় সদর আসনের সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দেখা গেছে, অল্পসংখ্যক ভোটার এসেছেন। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, তার কেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ২৭৯ জন। ৮৫টি ভোট পড়েছে। পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। একই সময় পাশের মুস্তাফাবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৯০টি। এখানে ভোটার সংখ্যা তিন হাজার ৬০৯ জন।

বেলা পৌনে ১১টায় ইসলামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১৫৩টি। বেলা সাড়ে ১১টায় ছয়পুকুরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১৮৫টি। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার দুই হাজার ৮৪২ জন। দোতলায় পুরুষ কেন্দ্রে ভোটার দুই হাজার ৮০৩ জন। একই সময় পর্যন্ত ভোট পড়েছে ১৬০টি।

বগুড়া-৬ আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু ভোট দেন শহরের হাসনা জাহান ভান্ডারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। তিনি বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আশা করি, সব ভোটার ভোট দিতে আসবেন।’ নির্বাচনে জয়লাভের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে সব প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছেন। তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

এদিকে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের উপনির্বাচনে বেলা ১২টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা না যাওয়ায় এবং শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ায় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম দেখা গেছে। এই আসনে প্রার্থী পাঁচ জন হলেও মূলত লড়াই হবে জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন (লাঙ্গল মার্কা) এবং ১৪ দল মনোনীত ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অধ্যাপক ইয়াসিন আলীর (হাতুড়ি মার্কা) মধ্যে। 

১৪ দল মনোনীত ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বেলা ৯টায় তার নিজ কেন্দ্র রাণীশংকৈল মডেল স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় সার্বিক পরিস্থিতিতে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের অন্যতম প্রার্থী (লাঙল মার্কা) জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ তার নিজ কেন্দ্র পীরগঞ্জ পাইলট স্কুলে বেলা ১০টায় ভোট দেন। তিনি জানান, প্রচণ্ড শীতের কারণে এখন পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি কম। তবে দু-একটা ইভিএম মেশিনে সাময়িক ত্রুটি দেখা গেলেও সার্বিক পরিবেশকে সন্তোষজনক। উভয় প্রার্থীই জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী বলেও জানালেন তিনি।