রাজশাহীতে ৩ জনকে হত্যা

রাজশাহী নগরীতে পৃথক ঘটনায় তিন জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে চুরির অভিযোগে দুই শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চার জনকে আটক করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার মুগনিয়া গ্রামের সামাদের ছেলে আতাউর রহমান (৪৫) ও রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার রাজু ওরফে রাকিব।

অন্যদিকে রাজশাহী নগরীতে ছুরিকাঘাতে কাজেম আলী বিদ্যুৎ (৪০) নামে একজনকে হত্যা হয়েছে। বিদ্যুৎ নগরীর চন্দ্রিমা থানার ছোটবনগ্রাম স্কুলপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন সপুরা বিশাল বিস্কুট ফ্যাক্টরির সামনের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার জন্য এসেছিলেন দুই শ্রমিক। এরই মধ্যে বাড়ি থেকে টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। এই সন্দেহে দুই শ্রমিককে বেঁধে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে রামেক হাসপাতালে তাদের মৃত্যু হয়।

রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‌আহত অবস্থায় বোয়ালিয়া থানা পুলিশ দুজনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‌এ ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন বাড়ির মালিক আব্দুল্লাহ (৩৮), তার শ্বশুর মাসরুম রেজা (৫০), চাচাতো শ্যালক মনির উদ্দিন রিয়াল (১৯) ও কর্মচারী ইমরান হোসেন (২১)।'

জানা গেছে, নগরীর সপুরার মডার্ন ফুডের মালিক আব্দুল মালেক হাজীর ছেলে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর কারখানা সংলগ্ন বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন দুই শ্রমিক। বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০ লাখ টাকা চুরির অভিযোগে দুই শ্রমিককে খুঁটিতে বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। চুরির স্বীকারোক্তি আদায়ে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত দুই শ্রমিকের ওপর নির্যাতন চলে। নির্যাতনের সময় মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা হয়। এই ধরনের দুটি ভিডিও পুলিশ উদ্ধার করেছে। 

এদিকে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার সংলগ্ন মালিকের বাসায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় দুই শ্রমিককে গুরুতর অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশ পিকআপে তুলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এক শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন। আহত রাজু ওরফে রাকিবকে ৮ নং ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু ভর্তির কয়েক মিনিট পর তারও মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে দুই শ্রমিককে উদ্ধারের সময় কারখানা মালিকের ছেলে আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহর শ্বশুর মাসুম রেজা, শ্যালক মহিউদ্দিন রিয়াল ও ম্যানেজার এমরান হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের বোয়ালিয়া থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে রাতেই খবর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এজাহার পাওয়া সাপেক্ষে হত্যা মামলা করা হবে।

অন্যদিকে, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, নাসিম ও আকাশ নামের দুই তরুণ দুপুরে কাজেম আলীর বাড়ির গাছ থেকে কুল পাড়ছিলেন। তখন বিদ্যুৎ তাদের কুল পাড়তে নিষেধ করেন। এ কারণে দুই তরুণ কথা-কাটাকাটি শুরু করেন। একপর্যায়ে বিদ্যুতের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে বিদ্যুতের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর নাসিম ও আকাশ পালিয়েছেন। তাদের আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। এ ব্যাপারে থানায় হত্যা মামলা করা হবে।