মুকুলে ছেয়ে গেছে গাছ, আমের বাম্পার ফলনের আশা

রাজশাহীতে এবার আম বাগানগুলোতে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মুকুল এসেছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মুকুলের ঝরে পড়ার হারও অনেক কম। কোথাও কোথাও আসতে শুরু করেছে গুটিও। কোনও ধরনের কেমিক্যালের প্রয়োগ ছাড়াই এমন সুস্থ-সবল মুকুলের সৌরভে বাগানিদের মুখে হাসি ফিরেছে। প্রত্যাশা করছেন, মুকুলের সঙ্গে সঙ্গে এবার আমেরও বাম্পার ফলন আসবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই রাজশাহীতে আমের চাষ বাড়ছে। বড় বড় বাগান কমলেও উন্নত জাতের নতুন নতুন আম বাগান গড়ে উঠছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগের বছরের তুলনায় এবার এক হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে আমের চাষ বেড়েছে।

mango5

আমের রাজধানী খ্যাত এই জেলায় এবার ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ ছয় হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এবার স্বাভাবিকভাবেই আমের গড় ফলন বেশি হওয়ার পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়ার কারণে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলনের সম্ভাবনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট ও দুর্গাপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমের চাষ করা হয়ে থাকে। উপজেলাগুলো ঘুরে দেখা যায়, মুকুল নেই, এমন কোনও গাছই নেই। উন্নত জাতের ছোট ছোট গাছগুলোতেও ব্যাপকহারে মুকুল ফুটেছে। এখন পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এ ছাড়া উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা গাছে মুকুল আসার আগেই পোকা দমন করতে কীটনাশকসহ পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন কৌশল অনুযায়ী পরিচর্যা করছেন। এ ছাড়া যারা দেশের বাইরে আম রফতানি করবেন তারা নিচ্ছেন বিশেষ পরিচর্যা।

mango4

দুর্গাপুর উপজেলার আম চাষি আব্দুল গফুর, সাইফুল ইসলাম, বাক্কার জানান, শীতের জড়তা কাটিয়ে বসন্তে আগমনে ধীরে ধীরে উষ্ণ হাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাগানের প্রায় ৯৫ ভাগ গাছে মুকুল শোভা পাচ্ছে। এ বছর ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ কম থাকায় এবার কাঙ্ক্ষিত ফলনের আশা করছেন।

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানা জানান, এই উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। আম চাষে অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। মাত্র ২-৩ বছর বয়স থেকে আমের ফলন শুরু হয় এবং দীর্ঘসময় পর্যন্ত টানা ফলন পাওয়া যায়। এ বছর দুর্গাপুরে এক হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।

mango3

তিনি আরও জানান, উপজেলার উৎপাদিত আমের গুণগতমান খুব ভালো। তাই এ উপজেলায় উৎপাদিত আমের চাহিদাও প্রচুর।

বাঘা উপজেলা থেকে সাদি এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কয়েক বছর ধরে বিদেশে আম রফতানি করছে। এ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ২৫০ থেকে ৩০০ বিঘা জমিতে আমবাগান আছে। এবার তাদের শতভাগ গাছেই মুকুল এসেছে। আর যেহেতু তারা আম দেশের বাইরে রফতানি করেন- রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে বাড়তি নজরদারিসহ বিশেষায়িত পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সেই পরিচর্যার প্রক্রিয়াগুলো কিছুটা সহজ ও সাশ্রয়ী হয়েছে।

বাঘা উপজেলার গোচর গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, এলাকার প্রতিটি মানুষের আম গাছ রয়েছে। যে ব্যক্তি অন্যের জমিতে বসবাস করেন তিনিও বাড়ির আঙিনায় একটি গাছ লাগিয়েছেন।

mango2

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান জানান, অল্প সময়ের মধ্যে আমের ফলন পাওয়া যায়। মাত্র ২-৩ বছরের মধ্যে গাছে আম আসে। দীর্ঘ সময় ধরে আম পাওয়া যায়। এ উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য খুব উপযোগী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার আশানুরূপ ফলন হবে। মে, জুন ও জুলাই তিন মাস গাছে আম পাওয়া যায়। গাছে যে পরিমাণ মুকুল এসেছে, আবহাওয়া ভালো থাকলে উৎপাদন ভালো হবে। উপজেলায় আট হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, রাজশাহীতে আম চাষের জন্য যে আবহাওয়াকে অনুকূল হিসেবে ধরা হয়, এখন তা শতভাগ আছে বলাই যায়। এ কারণে গাছে গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। এবার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা রয়েছে।