১৬ বছর পর গালে তিল দেখে ছেলেকে চিনলেন মা!

পাঁচ মাস বয়সে বাবাকে হারিয়ে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওয়ালিয়া বাজারের পাশে ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফের ছেলে সাহাবুল।এরপর বড় বোন সম্পার আদরে বড় হন তিনি। তাদের মা সাহেরা বেগম আয় করতে মানুষের বাড়ি, মাঠ-ঘাটে কাজ করতেন। সাহাবুলের বয়স যখন ১৬ বছর তখন এলাকার অন্য মানুষদের সঙ্গে কাজের খোঁজে পাড়ি জমায় ঢাকার মানিকগঞ্জে। এরপর থেকে তার খোঁজ মেলেনি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর তিনি ফিরেছেন পরিবারের কাছে। গালে তিল দেখে ছেলেকে চিনলেন মা। সাহাবুলের বাড়ি ফেরায় আনন্দ-অশ্রুতে ভাসছে এখন পুরো এলাকা।

বড় বোন সম্পা আনন্দ অশ্রুভেজা নয়নে জানান, ভাইয়ের খোঁজে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন তারা। গত ১৬ বছর ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে তাদের আনন্দের পরিবর্তে অশ্রুভেজা নয়নে কেটেছে। এতদিন পর একমাত্র ভাইকে পেয়ে তার আনন্দের সীমা নেই।

মা সাহেরা বেগম জানান, এক মাস আগে সাহাবুলের ফুফাতো ভাই ফরিদপুরে কাজে গিয়ে সাহাবুলকে চিনতে পারেন। পরে তার সঙ্গে সাহাবুলকে কথা বলিয়ে দেন। ছেলের কন্ঠ শুনেই তিনি  নিশ্চিত হন। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে মেয়ে আর জামাইসহ স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে সাহাবুলকে ফেরাতে ফরিদপুর যান। ছেলের ডান গালে থাকা তিল দেখে তিনি তাকে শনাক্ত করেন। ছেলেও তাদের সবাইকে চিনতে পেরেছে। 

স্থানীয়রা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরের পর বছর অনেক খোঁজ করেও না পাওয়ায় নিরাশ হয়ে পড়েছিলেন সাহাবুলের পরিবার। অবশেষে সাহাবুলকে পেয়ে তারা আনন্দিত।

সাহাবুলকে দেখতে আসা প্রতিবেশি মুদি দোকানি শুকলা রানী জানান, ছোটবেলায় সাহাবুল তাদের দোকানে যেতেন। তাকে খেজুর পেড়ে খাওয়াতেন। সে সব স্মৃতির কথা সব বলছেন সাহাবুল।

সাহাবুল জানান, অভাবের সংসারে কাজের উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালে এলাকার কিছু মানুষের সঙ্গে মানিকগঞ্জ যান। সেখান থেকে চলে যান চট্টগ্রাম। সেখানে জেলেদের সঙ্গে গভীর সমুদ্রে মাছ মেরে কাটতো তার জীবন। কিছুদিন পর বাড়ি ফিরতে চাইলেও জেলেদের বাধার মুখে আর ফেরা হয়নি। হঠাৎ একদিন পালিয়ে বাড়ি আসার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। মাথায় আঘাতের কারণে অনেক দিন তিনি সঙ্গাহীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে তিনি ফরিদপুরে কাজ শুরু করেন।

এক মাস আগে ফরিদপুরের আটরশি এলাকায় ফুপাতো ভাই কাজের জন্য গেলে তাকে চিনতে পারে। দীর্ঘদিন পর সবাইকে পেয়ে তিনি আনন্দিত।