আচরণবিধি লঙ্ঘনের জবাবে মাহি বললেন, ‘দোয়া চাইতে গিয়েছিলাম, ভোট চাইনি’

নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে লিখিত জবাব দিয়েছেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি (শারমিন আক্তার)। রবিবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু সাঈদের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত জবাব দেন তিনি।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসন থেকে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই চিত্রনায়িকা। শুক্রবার আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান বিচারক আবু সাঈদ।

মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমার কাছে লিখিত জবাব চেয়েছিলেন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান। আমি জবাব দিয়ে এসেছি। আমার জবাব পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন বিচারক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চিত্রনায়িকা। আমাকে নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। অনেকে সংবাদের ভেতরটাও পড়ে দেখেন না। পদ্মার চরে গিয়েও তা-ই হয়েছে। আমি সেখানকার মানুষের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিও বিভ্রান্ত হয়েছেন বলে আমি মনে করি। তাই জবাব দিয়ে এসেছি।’

কারণ দর্শানোর নোটিশে মাহিয়া মাহিকে বলা হয়েছিল, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে গত বৃহস্পতিবার তিনি গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে ভোটের প্রচারণা চালান এবং ভোটারদের কাছে ভোট চান। এতে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। বিষয়টি নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির নজরে এসেছে। তাই তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ করা হবে না তা সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য মাহিয়া মাহিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

নির্বাচনি আচরণবিধির ৬(ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা দলের মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনও ব্যক্তি জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে; এমন কোনও সড়কে জনসভা কিংবা পথসভা করতে পারবেন না। আচরণবিধির ১২ ধারা অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ আগে কোনও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না।

চিঠির ব্যাখ্যা দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মাহিয়া মাহি। তিনি বলেন, ‘প্রথমবারের মতো নির্বাচন করছি। আচরণবিধি সম্পর্কে জানতাম আমি। তবু কনফিউশন থেকে গিয়েছিল। সেখান থেকে আমি ভুল করেছি। আমি দোয়া চাইতে গিয়েছিলাম, ভোট চাইনি। তারপরও এটা আচরণবিধির মধ্যে পড়ে। এ জন্য আমি বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি। আদালত আমাকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, যাতে পরবর্তীকালে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে আমি বিরত থাকি। আমি সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার চেষ্টা করবো।’

এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে মাহি বলেন, ‘নিয়ম সবার জন্য সমান। বর্তমান সংসদ সদস্যকেও শোকজ করা হয়েছিল। মাঠপর্যায়ে আপাতত ভালো অবস্থা আছে। এখন পর্যন্ত কোনও হুমকি পাইনি। তবে প্রচারণা শুরু হলে তখন বোঝা যাবে। কোনও ধরনের সমস্যা হলে সাংবাদিকদের মাধ্যমে তা দেশবাসীকে জানানো হবে।’ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও ইচ্ছা নেই বলেও জানান তিনি।

পছন্দের কোনও প্রতীক আছে কিনা—সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আছে। কিন্তু আজ বলবো না। আগামীকালই জানতে পারবেন। বড় দুটি উপজেলা। প্রচারণার কৌশল আছে।’

ভোটের মাঠে এসে কোনও বাধা পাচ্ছেন কিনা, জানতে চাইলে ঢাকাই সিনেমার এই নায়িকা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাকে কোনও ধরনের হুমকি দেওয়া হয়নি। সরে যাওয়ার কথাও বলা হয়নি। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, বিষয়টা আসলে তখন বোঝা যাবে। সরাসরি এখনও কোনও হুমকি আসেনি। প্রচারণার মাঠে গিয়ে আসলে কতটুকু প্রবলেম ফেইস করি সেটা আপনাদের সবাইকে (সাংবাদিকদের) জানাবো এবং সহযোগিতা চাইবো। যদি দেখি যে আমার কর্মীরা রিস্ক ফিল করছে, তাহলে অবশ্যই আপনারা সাপোর্ট করবেন এবং সেটা দেশবাসীকে জানাবেন।’

শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে মাহি বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আমি আগামী নির্বাচন পর্যন্ত যদি বেঁচে থাকি, শেষ পর্যন্ত লড়বো।’

আদালতের পেশকার মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আদালতে মাহিয়া মাহি তার ভুল স্বীকার করে বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন। আদালত তার জবাবে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে আদালত তাকে সতর্ক করেছেন, যেন ভবিষ্যতে তিনি আচরণবিধি মেনে চলেন।’

নির্বাচনে অংশ নিতে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন মাহিয়া মাহি। কিন্তু সেই আসন থেকে তিনি মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তিনি রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের গরমিলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে নির্বাচন কমিশনে আপিলের পর প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। এই আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি ও মাহি বাদেও আরও ছয় জন প্রার্থী রয়েছেন এই আসনে।