ইরি মৌসুমে সেচ সংকটের আশঙ্কা

মিটার চুরি করে মোবাইল নম্বর রেখে যাচ্ছে চোরেরা, কল দিলেই টাকা দাবি

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় ইরি বোরো মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকায় মাঠ থেকে বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরির হিড়িক পড়েছে। গত দুই মাসে অর্ধশতাধিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরির পর চোরেরা সেখানে মোবাইল ফোন নম্বরসহ চিরকুট রেখে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা পেলে ফেরত দেওয়া হচ্ছে। র‌্যাব ও পুলিশ চোরদের গ্রেফতার করলেও চুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। এসব ঘটনায় দিশেহারা কৃষকরা মৌসুমজুড়ে সেচ নিয়ে সংকটের আশঙ্কা করছেন।

অভিযোগ ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি ইরি বোরো মৌসুমে পশ্চিম বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গভীর ও অগভীর নলকূপ ও ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলার নশরৎপুর, চাঁপাপুর, কুন্দগ্রাম, বিহিগ্রাম, বনতইর, বড়িয়াবার্তা, হাউসপুর, বেজার ও ছাতিয়ানগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মাঠ থেকে অর্ধশতাধিক বৈদ্যুতিক মিটার ও দুটি ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে। চিরকুটে মোবাইল ফোন নম্বর লিখে যাচ্ছে চোরেরা। ওই নম্বরে কল দিলে চাঁদা দাবি করে আসছে।সামর্থ্যবান মালিকরা চাঁদা দিয়ে মিটার ছাড়িয়ে আনলেও অনেকে ব্যর্থ হচ্ছেন।

চাঁদা দিতে বাধ্য হওয়া কৃষকরা পরে হয়রানির ভয়ে চোরদের নাম ও চুরির ঘটনা গোপন করছেন। কেউ কেউ একাধিকবার চুরির শিকার হচ্ছেন। চোরের দল নানা কৌশলে মিটার চুরির পর বিকাশের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করে চলেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও পাম্প মালিকরা দাবি করেন, তারা মিটার চুরির বিষয়টি জানালেও পুলিশ জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে পারছে না। ফলে দিন দিন চুরি বাড়ছে। ফলে চলতি ইরি মৌসুমে ক্ষেতে সেচ সংকটের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

উপজেলার মঠপুকুরিয়া গ্রামের কৃষকও গভীর নলকূপের মালিক গোলাম রব্বানী বলেন, গত এক মাসে কয়েকটি গভীর নলকূপ থেকে প্রায় ২০টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে মঠপুকুরিয়া গ্রামের হাজী মোহাম্মাদ আলীর মিটার দুইবার চুরি হয়েছে। একই গ্রামের আব্দুস সালামের মিটার চুরি হয়েছে তিনবার।

একইভাবে উপজেলার পাহালোয়নপাড়া গ্রামের বেলাল হোসেন ও কামরুল ইসলামের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বেলাল হোসেন আদমদীঘি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

বেলাল হোসেন জানান, থানায় ডায়েরি (জিডি) করার পরও পুলিশ কোনও সুরাহা করতে পারেনি।

গভীর নলকূপের মালিক গোলাম রব্বানী জানান, মিটার চুরির পর চোরেরা একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি হলে তারা বিকাশ ও নগদ নম্বর দেয়। টাকা দেওয়া হলে তারা নির্জন জায়গায় মিটার রেখে যায়। এভাবে চুরি অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমে ইরি বোরো আবাদ করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ছাড়া মৌসুমের শুরু থেকে চুরি শুরু হওয়ায় অনেকে এখনও ধানের চারা রোপণ করতে পারেননি।

সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ রাতে উপজেলার চাঁপাপুর ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম থেকে ১০টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়। সংঘবদ্ধ চোরের দল নিজেদের ‘মিটার চোর’ উল্লেখ করে সেখানে একটি চিরকুট রেখে যায়। ওই চিরকুটে মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রাখে। এরপর মিটার মালিক ওই নম্বরে কল দিলে ১৪ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবি করে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে আদমদীঘি থানার ওসি রাজেশ কুমার চক্রবর্তী জানান, বৈদ্যুতিক মিটার চোর শনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

দুপচাঁচিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের জানান, তার আওতাধীন এলাকায় মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরি থামছেই না। গত দুই মাসে প্রায় ৫০টি মিটার ও দুটি ট্রান্সমিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।