বিএনপি নেতার গোডাউন থেকে সরকারি ১১৯ বস্তা চাল উদ্ধার, মামলা করতে অনীহা খাদ্য বিভাগের

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিএনপি নেতার গোডাউনে মজুত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১১৯ বস্তা (৫. ৮ মেট্রিক টন) চাল উদ্ধারের ঘটনায় অবশেষে থানায় মামলা করা হয়েছে। তবে এ ঘটনা মামলা করতে অনীহা দেখিয়েছেন জেলা খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

বুধবার (৭ মে) বিকালে উপজেলা কামারদহ ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সুকুমার রবিদাস বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। মামলায় গোডাউনের মালিক কামারদহ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুল ইসলাম সাবুকে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।

তবে মামলার পরপরই থানা পুলিশের হেফাজতে থাকা সাহাবুল ইসলাম হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বুলবুল ইসলাম বলেন, থানা হাজতে থাকা সাহাবুল ইসলাম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে তাকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মামলার বিষয়ে ওসি জানান, চাল উদ্ধার ও আটকের ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন এবং খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দেওয়ার কথা। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত তাদের কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। পরে ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে গ্রাম পুলিশ সুকুমার রবিদাস থানায় লিখিত এজাহার দিলে তা মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় থাকা সাহাবুল ইসলাম সুস্থ হলে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হবে।

এদিকে, চাল উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দিনভর মামলা করতে অনীহা প্রকাশ করায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত একজন গ্রাম পুলিশকে মামলার বাদী করায় সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শুধু তাই নয়, আটক বিএনপি নেতাকে বাঁচাতে দিনভর তার পরিবারসহ একটি মহল নানা চেষ্টা, তদবির চালানোর অভিযোগ করেছেন স্থানীয় অনেকে।

অপরদিকে, সংগঠনবিরোধী কাজের সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাহাবুল ইসলামকে কামারদহ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব ও প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. মইনুল হাসান সাদিক ও সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন্নবী টিটুল স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ফাঁসিতলা বাজারে অভিযান চালিয়ে গোডাউন থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১১৯ বস্তা সরকারি চাল উদ্ধার করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আসাদুজ্জামান। চাল মজুতের অভিযোগে আটক করা হয় বিএনপি নেতা সাহাবুল ইসলাম সাবুকে। পরে জব্দনামা তৈরি করে চালগুলো খাদ্যগুদামে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রওশানুল কাওসার মানিক বলেন, যেহেতু অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও প্রশাসন, তাই মামলাও তাদের করতে হবে। চাল উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডিলার জড়িত থাকলে খাদ্য বিভাগ থেকে মামলা করা হতো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা মামলা না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

আপনারা জড়িতদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নিয়ে আমি কিছু জানি না।

এর আগে গত সপ্তাহে কোচাশহর ইউনিয়নের শক্তিপুর গ্রামের জামায়াত নেতা আব্দুল কাফির বাড়ি থেকে ১৮৭ বস্তা চাল উদ্ধার ও মজুতের অভিযোগে আটক সবুজের বিরুদ্ধে নিজে বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন খাদ্য কর্মকর্তা রওশানুল কাওসার মানিক।

এ ছাড়া মামলা করার বিষয়ে কিছুই জানেন না উপজেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) হাসনাত জামাল। তিনি বলেন, কে মামলা করবে না করবে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি শুধু জব্দ করা চালগুলো গুদামে জমা রেখেছি।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযানে গোডাউন থেকে ৫০ কেজির ওজনের ১১৯ বস্তা চাল ও খাদ্য অধিদপ্তরের লোগোযুক্ত বেশ কিছু খালি বস্তা জব্দের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজেয়াপ্ত করে সেগুলো খাদ্য গুদামে পাঠানো হয়েছে। এ সময় চাল কিনে গোডাউনে মজুতের অভিযোগে সাহাবুল ইসলামকে আটক করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ ও খাদ্য বিভাগ। এ ঘটনায় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বাদী হয়ে মামলা করার কথা। তবে কেন দিনভর মামলা দেননি তার জবাবও দেননি তারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কামারদহ ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব সাহাবুল ইসলাম সাবু সুবিধাভোগীদের কাছে থেকে চালগুলো কম দামে কিনে একটি গোডাউন ভাড়া নিয়ে মজুত রাখেন। পরে চালগুলো বেশি দামে খোলা বাজারসহ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করতেন তিনি। এ ছাড়া কামারদহ ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার ফয়জুর রহমান হলেও তার কাছে জোরপূর্বক কাগজ-কলমে স্বাক্ষর নিয়ে ওই ভাড়া গোডাউন থেকে সাহাবুল ইসলাম ডিলারের কার্যক্রম চালাচ্ছেন।