গাইবান্ধায় বেড়েছে খুন-আত্মহত্যার ঘটনা, জনমনে উদ্বেগ

 

গাইবান্ধা জেলা

গাইবান্ধায় হঠাৎ করেই বেড়েছে খুন ও আত্মহত্যার ঘটনা। চলতি মাসে সদর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাদুল্যাপুর উপজেলায় ৬টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এছাড়া সাত উপজেলায় ২৯টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে শুধু গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাতেই তিনদিনের ব্যবধানে ৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক বিরোধ, মাদক আগ্রাসন কিংবা তুচ্ছ ঘটনার জেরসহ নানা কারণে ঘটছে এসব হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা।

জানা গেছে, ১৭ আগস্ট গোবিন্দগঞ্জের গোপালপুর গ্রামে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে ছোট ভাইয়ের হাতে ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি খুন হয়েছেন। একই দিন বিকালে কাঁঠালবাড়ি গ্রামে একটি প্লাস্টিকের পিস্তলকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসাছাত্র রাহাতকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিবেশী পরিবারের লোকজন। এর একদিন পর ১৯ আগস্ট গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার প্রধানপাড়ায় মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বে একজনকে হত্যা করা হয়। আকালু মিয়া নামে এক শ্রমিককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে মাদকাসক্ত কয়েকজন যুবক। এছাড়া আত্মহত্যা ও অজ্ঞাত পরিচয় যুবকসহ ৭ জনের লাশ উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ।

অপরদিকে, ১৭ আগস্ট পলাশবাড়ী উপজেলায় নিখোঁজের তিনদিন পর ঠুঠিয়াপুকুর এলাকার ইটভাটা সংলগ্ন ড্রেন থেকে জব্বার মিয়া নামে এক ভ্যানচালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শ্বাসরোধ করে জব্বারকে হত্যার পর লাশ ফেলে ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সদর উপজেলার সাহাপাড়ার জোদ্দকোড়িসিং গ্রামে গত আগস্টে জিন্নাত আরা নামে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে। যৌতুকের দাবিতে বালিশচাপা দিয়ে জিন্নাত আরাকে হত্যার অভিযোগে স্বামী মামুন মিয়াসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার পরিবার।

এছাড়া সাদুল্যাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলবাড়ি গ্রামের একটি পুকুর থেকে গত ২৬ আগস্ট সকালে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিহারুল ব্যাপারি (৪৫) নামে এক রাজমিস্ত্রি সহকারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব হত্যাকাণ্ড ছাড়াও চলতি মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনায় নারীসহ ২৯ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

হঠাৎ করেই একের পর এক হত্যা আর আত্মহত্যার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ-আতঙ্ক। হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

হত্যা, আত্মহত্যা ও অপরাধ দমনে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি সামাজিক অবক্ষয় রোধে মাদক নির্মূল, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চাসহ সচেতনতা বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

জেলা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধ, তুচ্ছ ঘটনা আর মাদকসহ নানা কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো আছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত প্রধান ও সহযোগী আসামিদের গ্রেফতারসহ মামলার তদন্ত কার্যক্রমের অগ্রগতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণসহ যে কোনও অপরাধ দমনে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে তিনি জানান।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট মাসে (১ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত) জেলায় ৫টি হত্যাকাণ্ড আর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে পাঁচটি হত্যা মামলা ও ২৯টি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলায় গৃহবধূ জিন্নাত আরা হত্যার ঘটনায় স্বামী মামুন মিয়া ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।