স্কুল বন্ধ, অবাধে চলছে কোচিং বাণিজ্য

নীলফামারীর সৈয়দপুরে লকডাউনেও অবাধে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার। এদিকে সরকারি নিয়ম নীতি ও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে একটি ছোট্ট কক্ষে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন কোমলমতি শিশুদের নিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছে বর্ণমালা নামের একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা।

উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন রাত চলছে তাদের এ অবৈধ ব্যবসা। সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষা অফিসের ছত্রছায়ায় শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শহরের বাঙালীপুর দারুল উলুম মাদরাসা মোড়ে দীর্ঘদিন থেকে বাসা ভাড়া নিয়ে বর্ণমালা কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন রামকৃষ্ণ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ শাহ। অবসরে যাওয়ার পর থেকে এটিই তার আয়ের মূল উৎস।

এখানে তিনি ‘চ্যালেঞ্জের সঙ্গে পিএসসি জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা’ দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের কোচিং করান। তাকে সহযোগিতা করেন এবং নিয়মিত ক্লাস নেন আরও দুইজন প্রাইমারির শিক্ষক। তারা হলেন, উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার মো. মহিউদ্দিন ও শহরের পুরাতন বাবুপাড়া এলাকার রহমতুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. শাহনেওয়াজ পারভীন বিউটি। কর্মস্থলের পাশে হওয়ায় বিউটি প্রায় স্কুল বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টারে অবস্থান করেন।

এছাড়াও মাঝে মাঝে অন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কমিশনের মাধ্যমে সেখানে পাঠদান করেন।

শিক্ষা অফিসে কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত মিলন বর্ণমালা কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও আব্দুস সামাদ শাহের বড় ছেলে।

শনিবার (১০ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কোচিং সেন্টারের দুটি কক্ষে প্রায় ৫০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে ক্লাস করছেন ওই শিক্ষকরা।

লকডাউনে কেন কোচিং সেন্টার খোলা রয়েছে, জানতে চাইলে শিক্ষক আব্দুস সামাদ বলেন, আজই শেষ ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। বাচ্চাদের সাজেশন দিয়েই ছুটি দেওয়া হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা কী প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রশাসন, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই আমি কোচিং সেন্টার চালাই।

এ ব্যাপারে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ও ক্লাস্টার অফিসার (এটিও) রুহুল আমীন প্রধানকে জানানো হলে তিনি মুঠোফোন জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনওভাবেই প্রাইভেট বা কোচিং করাতে পারেন না। তবুও যদি কেউ করে এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিষয়টি দেখছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোন কথা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিও) মো. নবেজ উদ্দিনের সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
/এমআর/